কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। টমেটোর চাষিদের চোখে-মুখে এখন আনন্দ ও উল্লাস। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার টমেটো চাষিরা। এ বছর শুরু থেকেই টমেটোর ফলন বেশি, দামও দ্বিগুণ পেয়ে খুশি কৃষক- কৃষাণিরা। প্রথম দিকে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। বর্তমান বাজার দর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে চান্দিনা পৌরসভাসহ প্রায় আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এ বছর টমেটোর চাষ হয়েছে। চান্দিনা পৌরসভার ছায়কোট, তুলাতুলি, বেলাশর, চান্দিয়ারা, বিশ্বাস, গোবিন্দপুর, হারং, রারিরচর, সুহিলপুর ইউনিয়নের বশিকপুর, শালিখা, মহিচাইল ইউনিয়নের হোসেনপুর ছাতাড্ডা, গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর কালিয়ারচর, নবাবপুর ইউনিয়নের রসুলপুর জিরুআইশ, বরকরই ইউনিয়নের বরকরই দেওকামতা, জোয়াগ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোড়া, এতবারপুর ইউনিয়নের মধুশাইর, বাড়েরা ইউনিয়নের দোবাড়িয়া, চিলোরা, ডুমুরিয়া, বরকইট ইউনিয়নের খিরাসার মোহনপুর, শ্রীমন্তপুর, পিহর, এসব এলাকা ছাড়াও অনেক গ্রামে টমেটোর চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো। টমেটো চাষিরা জানিয়েছেন, গত বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় টমেটো চাষ করে তারা তেমন লাভবান হতে পাড়েননি। এ বছর তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় চান্দিনা পৌরসভার শ্রীমন্তপুর গ্রামের মোবারক হোসেন বাসসকে জানান, তিনি ১৩০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ করতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করেছেন প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং যে পরিমাণে টমেটো জমিতে রয়েছে আরো ১ লক্ষ টাকার ওপরে বিক্রি আসবে বলে তিনি আশা করেন। অপর টমেটো চাষি মো. মুনাফ ব্যাপারি জানান, তিনি ১৫০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা, এখন পর্যন্ত তিনি টমেটো বিক্রি করেছেন প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো।
প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে আরো ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান। সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায় অনেক টমেটো চাষিদের একই কথা বিল্লাল হোসেন বাসসকে বলেন, প্রতি শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, তিনি ৮০ শতাংশ জমিতে রাজা সুলতান অনন্যা শেখশাম জাতের টমেটো চাষ করেছেন এ পর্যন্ত যে পরিমাণ টমেটো বিক্রি করেছেন এবং আরো টমেটো যে পরিমাণে জমিতে রয়ে গেছে, খরচের দ্বিগুণ টাকা আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুরসহ বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এ অঞ্চলের টমেটো নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানী ঢাকার পাইকার মনির হোসেন বলেন, কুমিল্লার নিমসার কাঁচাবাজার থেকে প্রতি বছর এ অঞ্চলের টমেটো পাইকারি কিনে নিয়ে যাই। এখানকার টমেটো ভালো সুস্বাদু, রং, সাইজের কারণে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। তাই দেশের অন্য জেলার চেয়ে কুমিল্লার চান্দিনার এ টমেটো নিতে বেশি আগ্রহী ক্রেতারা।
চান্দিনা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম রোমেল বাসসকে বলেন, এ বছর টমেটো আবাদ করে কৃষকরা খুবই খুশি। তিনি আরো জানান, কৃষক প্রতি হেক্টরে ৮০ থেকে ৮৫ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছে। টমেটো আবাদে অল্প ব্যয়ে লাভ বেশি এজন্য কৃষকের মধ্যে টমেটো চাষে দিন দিন আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।