ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা কয়েক কদিন আগেও অনুমান করা যায়নি। শঙ্কা এখনো কাটেনি। সবচেয়ে খারাপ পরিণতি দেখেছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। ৯ মার্চ আমানতকারীরা ব্যাংকটি থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলার তুলে নেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন যে তিনটি বড় ব্যাংকের পতন হয়েছে তার মধ্যে এসভিবি অন্যতম। তাই বিপর্যয় ঠেকাতে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এখনো অনেক গ্রাহকের মনে প্রশ্নে ব্যাংকে রাখা গচ্ছিত অর্থ নিরাপদ কি না।
এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। কারণ চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর বাজার মূল্য কমেছে ২২৯ বিলিয়ন ডলার। এতে কোষাগারের অর্থ কমেছ। তাই মনে করা হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ গৃীষ্মে সুদের হার কমাতে পারে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ ও জাপানের ব্যাংকের শেয়ারও কমেছে। ক্রেডিট সুইস পড়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। ১৫ মার্চ ব্যাংকটির শেয়ার কমে ২৪ শতাংশ। ১৬ মার্চ ব্যাংকটি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা চায়। প্রশ্ন উঠেছে অর্থিক সংকটের ১৪ বছর পরেও ব্যাংকিং ব্যবস্থা কতটা ভঙুর তা নিয়ে।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা সামনে এসেছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনের মধ্যে দিয়ে। যখন সুদের হার কম ও অ্যাসেটের মূল্য বেশি ছিল তখন বন্ডে ঝুঁকে ক্যালিফোর্নিয়ার এই ব্যাংটি। কিন্তু সুদের হার ব্যাপকভাবে বাড়ার ক্ষতি হয় তাদের।
২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ব্যাংকগুলো অস্বীকৃত ক্ষতি হয় ৬২০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু
আশার কথা হলো সম্প্রতি সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যেভাবে পতন হয়েছে সে অবস্থায় নেই অন্যান্য ব্যাংক। অর্থাৎ অন্যগুলোর এভাবে পতন হওয়ার শঙ্কা কম। তবে সুদের হার বৃদ্ধির প্রবণতা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অরক্ষিত করছে।
২০০৭-২০০৮ সালের আর্থিক সংকট ছিল বেপরোয়া ঋণ এবং আবাসন ব্যবস্থায় মন্দার ফলাফল। সংকট পরবর্তী প্রবিধানগুলো তাই ঋণ ঝুঁকি সীমিত করার চেষ্টা করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে ব্যাঙ্কগুলো এমন সম্পদ ধারণ করবে যাতে নির্ভরযোগ্যভাবে ক্রেতা থাকবে। তারা ব্যাংকগুলোকে সরকারি বন্ড কিনতে উৎসাহিত করেছে। বিশ্ব পরিবর্তিত হলে অথবা দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের মূল্য কমে গেলে ব্যাংকগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা খুব কম লোকই ভেবেছিলেন। এই সমস্যা প্রকট হয়েছে করোনা মহামারিতে। সিলিকন ভ্যালি থেকে সুইজারল্যান্ড পর্যন্ত আমানতকারীর ও করদাতারা একটি শক্তিশালী ভয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন। এই ভয় ও ভঙ্গুরতার সঙ্গে তাদের লড়াই করা উচিত নয়।
এদিকে এবার বিপাকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের আস্থার সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি। আর সেই ব্যাংককে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে আমেরিকার বৃহত্তম ব্যাংকগুলোর একটি গ্রুপ। ১১টি ব্যাংক ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংককে ৩০ বিলিয়ন ডলার আমানত সহায়তা দিচ্ছে। ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বৃহত্তর ব্যাংকগুলোর একটি গ্রুপের এই সমর্থনকে স্বাগত জানাচ্ছে তারা। এটি ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করে।’
সহায়তার জন্য এগিয়ে আসা এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে জেপি মর্গান চেস, ব্যাংক অব আমেরিকা, ওয়েলস ফার্গো, সিটিগ্রুপ এবং ট্রুইস্ট। তবে ফার্স্ট রিপাবলিকের একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ছোটখাটো ব্যাংক নজরদারির মধ্যে রয়েছে। যাতে কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হয়। আমানতকারীদের তারা বলেছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।