সুসংবাদ প্রতিদিন
শেরপুরে মিষ্টি কুমড়া চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
জেলার নকলা উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এবার মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে নকলার চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, পঠাকাটা, উরফা, টালকী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের এলাকাগুলোতে মিষ্টি কুমড়া চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ কুমড়ার শাকও বেশ পুষ্টিকর। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়। নকলা উপজেলায় সুস্বাদু সবজি মিষ্টি কুমড়া সারা বছরই পাওয়া যায়। এ এলাকায় মিষ্টি কুমড়া ছাড়াও মৌসুমি সবজি গোলআলু, পটল, শিম, বেগুন, লাউ, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, বেগুন, চিচিংগা, টমেটো ও করলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। মৌসুমভিত্তিক নিরাপদ শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও পতিত জমিতে শাকসবজি আবাদে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সবজির আবাদ দিন দিন বাড়ছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এমন এক কৃষক হলেন টালকী ইউনিয়নের মো. আশরাফুল ইসলাম। এবছর ৯০ শতাংশ জমিতে আবাদ করা গোলআলুর ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করেছিলেন। গোলআলু তোলার পরে কুমড়ার গাছ ছড়িয়ে পড়ে সারা ক্ষেতে। আলু ক্ষেতে কুমড়া চাষ করায় বাড়তি কোনো খরচ করতে হয়নি। এ ৯০ শতাংশ জমিতে ১৪ প্যাকেট মিষ্টি কুমড়ার বীজ, দুইবার হালকা সেচ, একবার নিড়ানি ও সামান্য পরিমাণ জৈব সার দিতে হয়েছে। এতে করে সব মিলিয়ে তার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। কুমড়া চাষি হাবিবুল্লাহ মিস্টার বলেন, আমাদের অনুর্বর জমিগুলোতে আগে না বুঝে অনেক কিছু চাষ করতাম, তাতে লাভ কম হতো। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শে কয়েক বছর ধরে এসব জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করি। এতে লাভ বেশি হওয়ায় এখন সবাই মিষ্টি কুমড়ার দিকে ঝুঁকেছেন। তাছাড়া উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে কিনে নিচ্ছেন। এতে দাম কিছু কম পেলেও, সময় ও শ্রম বেঁচে যাওয়ায় লাভ বেশিই পাচ্ছি বলে মনে করা যায়। শুরুতে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। এখন পুরোপুরি মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, এবছর উপজেলায় ২০০ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার অপেক্ষাকৃত অনুর্বর শত একর জমিতে চাষ করা গোলআলু ক্ষেতে এ কুমড়ার আবাদ করা হয়েছেন। এমনকি প্রতিটি বাড়ির গৃহীনিরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পরিবারের চাহিদা মিটাতে ২-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার গাছ রোপণ করেছেন। এতে সব মলিয়ে আরো অন্তত ৫০ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে বলে ধারনা করছেন কৃষি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, সময়, শ্রম এবং খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। এ কারণে এ বারোমাসি সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কুমড়া চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।