ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠানোর পর আদালতে ফের শুনানিতে তিনি জামিন লাভ করেছেন। গতকাল শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহিকে গ্রেপ্তারের পর দুপুর দেড়টার দিকে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদালত-৫ এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেন।
এরপর বিকালে মাহির পক্ষে ফের জামিন আবেদন করে শুনানিতে মাহিয়া মাহির পক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাদাত, অ্যাডভোকেট রিপন চন্দ্র সরকার এবং অ্যাডভোকেট নবীজুল ইসলাম। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের মামলাসহ ব্যবসায়ীর মামলায় (দুটোতেই) জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
এর আগে, দুপুরে গাজীপুর আদালতে নিয়ে মাহিয়া মাহির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালতের বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. আহসানুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মাহিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে আদালতে নেয়া হয়। আদালতের বিচারক মাহিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তার রিমান্ড চাওয়া হয়নি।’
মাহির স্বামী রকিব সরকারের সঙ্গে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন। তবে মাহি ফিরলেও সঙ্গে দেশে ফেরেননি রকিব। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোরে স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালনরত মাহি সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেইসবুক লাইভে স্বামী রকিবের গাড়ির শোরুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন।
এ সময় লাইভে মাহি দাবি করে বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেখানে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। তারা শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাব, দরজা-জানালা, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেছে। শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছে। অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকাণ্ডপয়সা লুট করে নিয়ে গেছে।
ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকার নামে দুইজনের নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মাহি। এ সময় ফেইসবুকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই লাইভের সূত্র ধরে গত শুক্রবার রাতেই মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রোকন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এছাড়া জমি দখলের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি করে আরো একটি মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন।
মাহির ফেইসবুক লাইভের পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রকিব তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শো-রুম করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লাইভে এসে মাহিয়া মাহি কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, এজন্য মামলা হয়েছে। আমি সবকিছু জানি না, শুনেছি। বিষয়টি ভালো করে জেনে বলতে হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে মাহিয়া মাহি যে অভিযোগ (ঘুষ নেয়ার) করেছেন সেটা সঠিক কি না তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়িকা মাহি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামকে ফেরানোর উদ্যোগের বিষয়েও কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরইমধ্যে তাকে ধরে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।