ঢাকা ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য

* যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ দেন জিয়া * জনগণের প্রতি বিএনপির কোনো দায়িত্ববোধ নেই
মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। কাজেই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আমাদের লক্ষ্য। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই দেশের মানুষের জন্য কাজ করে।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান মাস, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এটা আমাদের সবার নজর রাখতে হবে, কেউ যেন খাদ্য মজুদ বা কালোবাজারি করতে না পারে। তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনো মানুষ খাদ্যে কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ভালো আছে। মানুষের কল্যাণে যা দরকার আওয়ামী লীগ সেটাই করে। মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি-জামায়াতের কষ্ট হয়। বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন অর্জন তুলে ধরতে হবে।

দেশের চিকিৎসা সেবায় সরকারের বিশেষ মনোযোগ দেয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আগে বেসরকারি খাতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিলো না। যন্ত্রপাতি আনতে অনেক খরচ হতো। আমি শুল্ক কমিয়ে দিয়ে বেসরকারি চিকিৎসায় উৎসাহিত করেছি। তারা সেসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, আবার বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি।

বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ নাকি শেষ করে দিয়েছি। চোখ থাকতে অন্ধ হলে তাকে তো কিছু দেখানো যায় না। ২০০৮ সালে নির্বাচনি ঘোষণা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করে দিয়েছি। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সর্বস্তরের মানুষের হাতে আমরা মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছি। এ সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, উড়াল সেতু, এক্সপ্রেস ওয়ে, একদিনে শত সেতু, শত সড়ক উদ্বোধনসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিক্রমা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে তারা (বিএনপি) বক্তৃতায় বলে যাচ্ছে বাংলাদেশে কিছুই হয়নি। ২০০৮ সালে সরকার গঠনের আগে ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট। আর এখন ৬ লাখ কোটি টাকার ওপর বাজেট দিয়ে যাচ্ছি। দেশের উন্নতি না হলে এই বাজেট কীভাবে দিলাম? যে সাক্ষরতার হার ৬২ ভাগে উন্নীত করেছিলাম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তা ৪২ ভাগে নামিয়ে এনেছিল। এখন সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি। এ সময় বিএনপি সরকারের শামসনামলে বিভিন্ন ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, কানসাটে তারা বিদ্যুতের জন্য গুলি করে মানুষ মেরেছে। সার চাওয়ার জন্য ১৮ জন কৃষকদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

বিএনপির কোনো শেকড় নেই মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, এরা (বিএনপি) অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। জনগণের প্রতি তাদের কোনো আস্থাও নেই। যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, একটা লুটপাতের রাজত্ব কায়েম করেছে। এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ এবং ৩৮ এর আংশিক সংশোধন করে মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যারা যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার শুরু হয়েছিল, তাদেরও জিয়াউর রহমান মুক্তি দিয়েছিল। এরপর তাদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে। এমনকি সাত খুনের আসামিকেও রাজনীতি করার সুযোগ দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানের দোসরদের সঙ্গে এ দেশীয় কিছু বেইমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, দেশের স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই চেতনা ফিরিয়ে আনে। আর কোনো দিন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না। বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ আত্মসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীরা এদেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

পঁচাত্তরের পর থেকে ৯৬ পর্যন্ত এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এ সময় পর্যন্ত দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৯৬-তে যা অর্জন করেছিলাম, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে শুধু তা ধ্বংসই করেনি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সারা দেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, বাড়িঘর ভাঙচুর, নির্যাতন করেছে বিএনপি-জামায়াত। এরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসেছে মানুষের জন্য কিছুই করেনি। জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া এদের তো শেকড় নেই।

তিনি বলেন, বিএনপি পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্বে চ্যাম্পিয়ান করেছে। দেশ ধ্বংস করেছে। আবার এক কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। এরপর দেশের মানুষের আন্দোলনের ফলে দেশে ইমার্জেন্সি হয়। বিএনপি নেতারা ক্ষমতায় থেকে এরা মানুষকে কি দিয়েছে?

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের বিপুল অর্থবিত্ত কীভাবে হলো- সেই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার ৪০ দিন পর্যন্ত দেখানো হলো জিয়া কিছু রেখে যায়নি। জিয়াউর রহমানের প্যান্ট ছোট করে তারেক ও কোকোকে পরাতো। একটা ভাঙা সুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেলো। তাহলে সরকারের আসতে না আসতেই কীভাবে হাজার হাজার কেটি টাকার মালিক হলো এরা? তিনি বলেন, কাদের টাকা চুরি করে হলো। চুরি তো চুরি, সে চুরি আবার ধরা পড়লো আমেরিকার এফবিআইয়ের হাতে। ধরা পড়লো সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গিয়ে। আমরা অবশ্য ৪০ কোটি টাকা ফেরত আনতে পেরেছি। এখনো বিএনপি নেতাদের বহু টাকা বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিজ করা আছে। তাহলে এই টাকা কাদের টাকা। জনগণের টাকাই এরা পাঁচার করেছে। আর জনগণকে কি দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা, গুলি, খুন, হত্যা ছাড়া আর কিছু দিয়ে যেতে পারেনি। আর তাদের ভাঙা সুটকেস তো যাদুর বাক্সে পরিণত হয়ে গেলো। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে, লঞ্চ হচ্ছে।

এ সময় শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধু মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, শৈশব থেকেই তিনি এলাকায় বিভিন্ন বিপদগ্রস্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে তার অন্তর কাঁদতো। এদেশের মানুষ ভালো জীবন পাবে সেটাই তিনি আজীবন চেয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের কম সময়ে তিনি দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মই হয়েছিল এই বাঙালি জাতিকে একটি আত্মপরিচয়, একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা এবং একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করার জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত