প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বৈশ্বিক বাজার অন্বেষণে একটি উপায় খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানি বিষয়ক ১১তম বৈঠকে এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে পদেক্ষপ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এবং স্থানীয় বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি এসব পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বাজার খোঁজার সুযোগ বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে। আমাদের এসব বাজার ধরতে হবে।’
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সাল নাগাদ মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বিদ্যমান রপ্তানি নীতিমালার সংশোধন, পরিবর্তন ও উন্নয়ন করে আরো ৪ কিংবা ৫ বছরের জন্য নতুন রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ¦ান জানান।
তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরনের পর বাংলাদেশে যেসব চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে নতুন রপ্তানি নীতি গ্রহণ করা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, এছাড়া কিছুই অর্জন করা যাবে না।
তিনি বলেন, একটি দেশের অর্থনীতি মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভর করায় আমরা রপ্তানি বাড়াতে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে নিয়ে ভাবছি। কাজেই, আমরা এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি বাড়াতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি এবং এর জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে রপ্তানি খাতের বিকাশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য তার সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৭.০৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৩৩.৮৪ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রপ্তানি থেকে আয় ছিল ১৬.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬০.৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। শেখ হাসিনা রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে এবং পোশাক, ওষুধ ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে, তাই একে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র আনতে হবে। চার থেকে পাঁচটি রপ্তানি পণ্য ঠিক করতে হবে। অনেক দেশ আমাদের পণ্য আমদানি করতে চায়, তাই কোন দেশের কোন পণ্য দরকার, সেটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীতা উল্লেখ করে বলেন, ‘অনেক দেশ আমাদের খাদ্য আমদানি করতে ইচ্ছে প্রকাশ করছে। এজন্য আমাদের খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে।’