ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আর্থিক ‘অনটনে’ হজের স্বপ্ন পূরণ হলো না অনেকের

১১ হাজারের বেশি কোটা খালি রেখে শেষ হলো নিবন্ধন
আর্থিক ‘অনটনে’ হজের স্বপ্ন পূরণ হলো না অনেকের

পেনশনের কিছু টাকা জমিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে হজে যাওয়ার জন্য ২০১৯ সালে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন ঝিনাইদহের একজন স্কুলশিক্ষক। করোনা পরিস্থিতিতে সৌদির নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে হজে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তাদের। গতবছর কোটার অর্ধেক হজের সুযোগ পেলেও সৌদি আরবের শর্ত অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়স হওয়ায় সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তারা।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর এবার সব শর্ত উঠে যাওয়ায় হজযাত্রার আশায় মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কিন্তু এবার হজ প্যাকেজের খরচ তিন বছরের আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং গতবারের তুলনায় প্রায় দেড় লাখ টাকা বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা। সার্বিক জীবন-যাত্রার ব্যয় মিটিয়ে আর্থিক অনটনের কারণে হজ প্যাকেজের বাড়তি টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি তাদের। তাই স্ত্রীকে বাদ রেখেই হজের নিবন্ধন করেছেন তিনি। একইভাবে প্যাকেজের বাড়তি টাকা সংকটের কারণে এবার অনেকেরই হজযাত্রার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে হজযাত্রী সংকটে চার দফা সময় বাড়িয়েও পূরণ হলো না বাংলাদেশের নির্ধারিত কোটা। সৌদি আরব থেকে বরাদ্দ অনুযায়ী ১১ হাজারের বেশি হজযাত্রীর কোটা খালি রেখেই শেষ হলো নিবন্ধন কার্যক্রম। অন্যবার যেখানে কোটার চেয়ে হজে যেতে আগ্রহীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় প্রাক-নিবন্ধন করে অন্তত একবছর অপেক্ষায় থাকতে হতো, সেখানে এবার কোটা পূরণ না হওয়ার পেছনে আর্থিক সংকটই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হজ প্যাকেজের খরচ কমাতে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও এখনো পর্যন্ত অনড় অবস্থানে আছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে অনেক হজযাত্রী খরচ কমার আশায় থেকেও শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন করেননি বলে এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন।

সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১৫ হাজার এবং বাকিরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়, যা ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিবন্ধনে তেমন সাড়া না পাওয়ায় পরে সময় আরো ৫ দিন বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। এরপরও নিবন্ধনের সংখ্যা খুব কম থাকায় সময় বাড়িয়ে ৭ মার্চ করা হয়। এরপরও কোটা অনেক খালি থাকায় শেষবারের মতো ১৬ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করে দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ সময় আর বাড়ানো হবে না বলেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল। তবে ওইদিনও কোটা অনেক খালি থাকায় ফের ২১ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজযাত্রীদের অনুরোধেই এ সময় বাড়ানো হয় বলে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়।

ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গতকাল এবারের হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। রাত সাড়ে ৭টায় হজযাত্রী নিবন্ধন সিস্টেম সূত্রে দেখা যায়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৮৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ৫ হাজার ৭৬৭ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে নিবন্ধনের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার ৬২৪ জন। সে হিসেবে ১১ হাজার ৫৭৪ জন হজযাত্রীর কোটা খালি থাকছে এবার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ-১) আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন গতকাল রাত ৭টার দিকে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, হজযাত্রী নিবন্ধন শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে সময় বাড়বে কি না তার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হজযাত্রী নিবন্ধনের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোটা অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৩ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৭ শতাংশ হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।

নিবন্ধন কম হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম নামের একজন এজেন্সি মালিক গতকাল বলেন, আমার এজেন্সির মাধ্যমে হজে যেতে ১২০ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু এবার খরচ বাড়ার কারণে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬০ জন নিবন্ধন করেছেন। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠার কারণে বেশ কয়েকজন খরচ কমার আশায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খরচ না কমায় তারা নিবন্ধনের আশাও ছেড়ে দিয়েছেন।

এবার হজের খরচ কমানোর কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, খরচ কে কমাবে? বিমানকে বলেন খরচ কমাতে। তারা ভাড়া কমালেই হজের খরচ অনেক কমবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্রমতে, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার প্রত্যেক হজযাত্রীর খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় হবে। গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছিল।

আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার কোরবানি ছাড়াই সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর আগের বছর যা ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।

সূত্রমতে, করোনাকালের আগে ২০১৯ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও সে বছর করোনার কারণে কারো হজে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। গত বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হজের খরচের বেশ কিছু খাতে খরচ বেড়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সৌদি আরবের মোয়াল্লেম ফি বাবদ প্রায় এক লাখ টাকা। এরপর বিমান ভাড়া প্রায় ৫৮ হাজার টাকা বেড়েছে। এছাড়া রিয়ালের মূল্য বৃদ্ধি বাবদ প্রায় সাড়ে ৬২ হাজার টাকা বেড়েছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ২১ মে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত