সুসংবাদ প্রতিদিন

কুমিল্লার হাটবাজার তরমুজে ভরপুর

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন মনোলোভা ফল তরমুজ কুমিল্লার হাটবাজারে আমদানি হতে শুরু করেছে ছোট-বড় আকারের হাইব্রিড জাতের তরমুজ। মৌসুমি ফল হিসেবে বিশেষ চাহিদার খ্যাতি রয়েছে তরমুজ ফলের। স্বল্প দামের বিশেষ গুণসম্পন্ন উৎকৃষ্ট সুস্বাদু ফলে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্যালরির মতো গুণাগুণ সম্পন্ন তরমুজের গ্রহণ যোগ্যতা প্রচুর। সহজ চাষযোগ্য ফলের ক্রয়মূল্য ক্রেতার নাগালে থাকায় গরিব-ধনী সবার তরমুজ খেতে পারছে। তাই সহজ আবাদযোগ্য হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপকূল চাষিরা মনোযোগী তরমুজের আবাদে। আর অক্লান্ত পরিশ্রমে উপকূলীয় অঞ্চলে আবাদ হওয়া সারা দেশের পাশাপাশি তরমুজ দখল করে নিয়েছে কুমিল্লার হাটবাজার ও শহর-গ্রাম। আর নানা জাতের স্তুপাকৃতির দৃশ্য নজর কাড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। সে সাথে লোভনীয় ফল ক্রয়-বিক্রয়ে সর্বত্র ভিড় জমেছে। কুমিল্লায় তরমুজ বিক্রেতা মো. তোফায়েল হোসেন বলেন, বাজারে তরমুজ আসতেই বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। স্বাদে-গুণে এগিয়ে থাকায় নোয়াখালীর তরমুজে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যে কারণে কুমিল্লা জেলার গ্রামেগঞ্জে বাজার ভরে উঠেছে নোয়াখালীর তরমুজে। আবার রৌদের দাপদাহ থেকে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সামর্থ্য অনুপাতে তরমুজ ক্রয় করতে পেরে খুশি ক্রেতারাও। কুমিল্লা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তরমুজের অনেক জাত রয়েছে। দেশীয় জাতের তরমুজের মধ্যে রয়েছে- গোলালন্দ ও পতেঙ্গা জাতের তরমুজ। বিদেশি জাতের মধ্যে রয়েছে- টপইল্ড, সুগার ডেলিকাটা, গ্লোরি, চালর্স, স্টোন গ্রে ইত্যাদি। হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে- পতেঙ্গা জায়েন্ড, মিলন মধুর, ওয়ার্ল্ড কুইন, বিগ টপ, চ্যাম্পিয়ন, অমৃত, সুগার এম্পায়ার, সুইট বেবি, ফিল্ড মাস্টার, সুগার বেলে, ক্রিমসন সুইট, ক্রিমসন গ্লোরি, মোহিনী, আমরুদ, ভিক্টর সপার, ওশেন সুপার, আসাই ইয়ামাভো, আধারি, পুষা বেদানা, পাটনাগরা, মুধ এফওয়ান ইত্যাদি। তবে বর্তমানে হাইব্রিড জাতের তরমুজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কৃষি বিজ্ঞানী ড. শহীদুল্লাহ বলেন, খাদ্য, পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর বিধায় তরমুজ বাঙালি সমাজে খুবই জনপ্রিয় ফল। প্রচণ্ড গরমে একফালি তরমুজ ক্লান্ত মানুষের রসনা তৃপ্ত করে। প্রতিদিন এক টুকরো তরমুজ খেলে শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বা চর্বি গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। হৃদরোগে ঝুঁকি কমে যায়। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকান গবেষকরা একদল ইঁদুরকে চর্বিযুক্ত খাবার ও তরমুজ খেতে দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের পরও পাশাপাশি তরমুজ খাওয়ার কারণে ইঁদুরগুলোর রক্তে লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএলর পরিমাণ অনেক কম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রক্তে এলডিএল চর্বি বৃদ্ধি পেলে ধমণীতে পানি জমে যায়। ফলে পানি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কৃষি বিজ্ঞানী ড. শহীদুল্লাহ আরো বলেন, নিয়মিত তরমুজ খেলে রক্তে চর্বি কমে যায়। তরমুজ সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় বেশি ফলে। বাংলাদেশে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বাতাসে জলীয় কণা কম থাকার কারণে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়। যে বছর বেশি বৃষ্টিপাত, সে বছর তরমুজের ফলন কমে যায়। এ বছর বৃষ্টি কম থাকার কারণে তরমুজের ফলন বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন এ কৃষি বিজ্ঞানী। তবে স্থানীয় জাতের তরমুজ এখন খুবই কম চাষাবাদ হয়। বিদেশি ফলের তুলনায় দেশি ফলের মূল্য একেবারে কম বললে চলে। আবার বেশি মূল্যের ফলের তুলনায় দাম কম ফলের পুষ্টিগুণ বহুগুণ। যে করণে সুস্বাদু তরমুজের বেড়েছে কদর।

এছাড়া ক্রয়সাধ্য হওয়ায় তরমুজের মাধ্যমে সব পুষ্টির চাহিদা পূরণ সম্ভব বলে জানান ক্রেতা আব্দুল করিম। তাই রোগ-বালাই হতে বাঁচতে হলে তরমুজসহ যে কোনো দেশীয় মৌসুমি ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কুমিল্লার মেডিক্যাল কলেজের ডা. ইজাজুল হক বাসসকে বলেন, তরমুজ ফল আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করাসহ বহু প্রকারের ভিটামিনসমৃদ্ধ ফল। প্রচণ্ড গরমের দিনে হিটস্ট্রোক হতে বাঁচাতে হলে সবাইকে তরমুজজাতীয় ফল খাওয়া জরুরি। আবার মৌসুমি ফলে সাধারণ মানুষের ভিটামিনের চাহিদা সম্ভব বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, তরমুজ চাষে প্রয়োজন বেলে দো-আঁশ মাটি, পর্যাপ্ত সার ফসফেট এবং পানি। পরিমাণ মতো পানির জোগান না থাকায় কুমিল্লা অঞ্চলে তেমন একটা তরমুজ চাষ হয় না। তবে পাশর্^বর্তী নোয়াখালী জেলার সুবর্ণ এলাকার তরমুজের ব্যাপক ফলন হচ্ছে। এসব অঞ্চলের তরমুজে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।