চট্টগ্রামে প্রাণনাশের হুমকি ও ভরণপোষণ না দেয়ার অভিযোগে এনে ছেলে মো. ইয়াছিনের (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বৃদ্ধ বাবা হাফেজ আবুল মোজাফফর।
গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়।
হাফেজ আবুল মোজাফফর চট্টগ্রামের (৭৮) লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা মাইজভিলা এলাকার মৃত মৌলভী লাল মিয়ার ছেলে। তিনি নগরের গণি বেকারি মোড় হযরত মোল্লা মিসকিন শাহ (রাহ.) মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত আছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে হাফেজ আবুল মোজাফফরের জমি ও ঘর দখলে নিয়ে বসবাস করছে ছেলে মো. ইয়াছিন। সম্পত্তি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য বাবাকে চাপ দিয়েও না পেরে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসার কথা এবং পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনে ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৩৫ টাকা ধার নেয় ইয়াছিন। সেই টাকাও ফেরত দেয়নি। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকাকালে লোহাগাড়ার আধুনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে হেবা দলিলে স্বাক্ষর নিয়ে নেয় ইয়াছিন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রামের বাড়িতে ছেলে সব সম্পত্তি নিজের দাবি করে বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর ১৬ মার্চ পুনরায় বাড়িতে গিয়ে ধার নেয়া টাকা ফেরত চাইলে উত্তেজিত হয়ে ছেলে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে। বাদীপক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, প্রাণনাশের হুমকি ও ভরণপোষণ না দেয়াসহ একাধিক অভিযোগে ছেলে মো. ইয়াছিনের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ বাবা হাফেজ আবুল মোজাফফর আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি গ্রহণ করেন এবং লোহাগাড়া থানার ওসিকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করার জন্য পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ প্রবর্তন করে। আইন অনুযায়ী, পিতা-মাতা বা দাদা-দাদি বা নানা-নানিকে ভরণপোষণ না দিলে তা অপরাধ হিসেব গণ্য হবে। এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্ছ ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং জরিমানার টাকা না দিলে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। যে সন্তানের ওপর ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায় সেই সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী বা ছেলেমেয়ে অথবা কোনো নিকট আত্মীয় এই আইন অনুযায়ী ভরণপোষণ দিতে বাধা দিলে বা অসহযোগিতা করলে তাকেও একই শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে।