জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে শাঁখারিবাজার সংলগ্ন গেট পর্যন্ত সদরঘাটগামী বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। যদিও বাসগুলোর রুট পারমিটে বাসস্ট্যান্ড সদরঘাট উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং একজন সহকারী প্রক্টরের আত্মীয় বাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষে এ বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সদরঘাটগামী প্রায় ১৫ থেকে ২০টি বাসের মালিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মচারী হাসান ও মোস্তাক মোল্লার মালিকানাধীন দুইটি বাস সাভার পরিবহনের ব্যানারে চলাচল করে। আরও দুইটি নতুন বাস আনার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে হাসানের সঙ্গে এ ব্যবসায় সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলাদারের এক আত্মীয়ও জড়িত রয়েছে। সাভার পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৩-২৪০৩, ১৩-২৪০৮ সিরিয়ালের এ বাস দুটি হাসান দেখাশোনা করেন এবং রাতে এ বাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বরাবর পার্কিং করে রাখা হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরও বাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সাভার পরিবহনের ১৫-৩৬৭২ সিরিয়ালের বাসটির মালিকানা তার বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। তাছাড়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল মালেকের বাস রয়েছে তিনটি। বাস তিনটি হলো সাভার পরিবহনের ১৩-২৪০৪, ১৫-৩৯২৭ এবং আজমেরী গ্লোরীর একটি বাস। সাভার পরিবহনে রেজিস্টার দপ্তরের সেকশন অফিসার সুমন নামের আরেক কর্মকর্তার ঢাকা মেট্রো-ব ১৩-২৪০৭ সিরিয়ালের একটি বাসে মালিকানা রয়েছে। তাছাড়া সিকিউরিটি অফিসার রফিক, গার্ড মনিরসহ বিভিন্ন বিভাগের সেকশন অফিসাররাও এ বাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের এসব কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বিভিন্ন সময় এ বাসস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করার কথা উঠলেও অজানা কোন এক কারণে তা আর হয়ে উঠতো না। আর এ বাসস্ট্যান্ডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ায় ঠিকভাবে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ, পথচারীদের।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সাভার পরিবহনের একটি বাস ঘুরানোর সময় ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় বাসের ধাক্কা খেয়ে শিক্ষক সহ শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনার পরও বাসস্ট্যান্ড উচ্ছেদে মুখে আশ্বাস দেয়া ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আজ পর্যন্ত।
সদরঘাটগামী বাসের লাইনম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ লাইনের অনেক বাসের মালিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী। তারাই বাসগুলো পরিচালনা করে থাকে। নিজ অফিসের কর্মচারী বাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, আমিতো প্রাণপণ চেষ্টা করছি এ বাসস্ট্যান্ড সরানোর জন্য। আর আমার দপ্তরের হাসান কেনো যার বাসই থাক না কেনো বাসস্ট্যান্ড না থাকলে তো কোনো বাসই থাকবে না। আপনারা সহযোগিতা করুন বাসস্ট্যান্ড সরানোর জন্য।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, বেশ কয়েকবার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বসেছি এ বাসস্ট্যান্ড সরানোর জন্য। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব কর্মকর্তা, কর্মচারী এ স্ট্যান্ডের বাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সেটা খোঁজখবর নিয়ে তারপর ব্যবস্থা নিব।