অন্যরকম

২০০ বছরের প্রাচীন বাদুড়ের ‘সাম্রাজ্য’!

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বাদুড় ডানা বিশিষ্ট উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার অদূরে বাদুড়তলায় চারটি তেঁতুল গাছে হাজারো বাদুড়ের বসবাস। বংশ পরম্পরায় এরা এখানে প্রায় ২০০ বছর ধরে আছে। এদের জন্যই এ এলাকার নাম হয়েছে বাদুড়তলা। তিন হাজারের বেশি বাদুড়ের চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে এলাকাটি। দিনের বেলায় এরা চারটি তেঁতুল গাছের ডালে ঝুলে থাকে আর ডালে ডালে ছুটে বেড়ায়। সন্ধ্যার পর তারা খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। বাদুড়দের আবাসভূমি যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য গাছগুলো না কেটে রেখে দিয়েছেন জমির মালিক। একেবারে শহরের উপর হওয়ার কারণে জায়গাটি হয়ে উঠেছে ব্যবসা সফল এলাকা। বর্তমানে এ জমির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কোটি টাকার বেশি। তারপরও শুধু বাদুড়দের জন্য গাছগুলো না কেটে সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে এই এলাকাটি ছিল একেবারেই নিরিবিলি। হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি বাড়িঘর ছিল এখানে। শহরের প্রধান সড়কের পাশে ছিল বেশ কয়েকটি তেঁতুল গাছ। তখন থেকেই গাছগুলোতে বাদুড়ের বসবাস। গাছগুলোসহ আশপাশের জমির মালিক ছিলেন ইউছুপ আলী জোয়ার্দ্দার। নির্জন এই এলাকাটিতে ধীরে ধীরে জনবসতি গড়ে ওঠে। কাগজে-কলমে এলাকাটির নাম এখনো শেখপাড়া থাকলেও মানুষের মুখে মুখে এ এলাকার নাম হয়ে গেছে বাদুড়তলা। চুয়াডাঙ্গার বাদুড়তলা এখন সফল ব্যবসাকেন্দ্র। এখানে গড়ে উঠেছে শহরের একমাত্র তিন তারকা মানের আবাসিক হোটেল, ব্যাংক, শপিংমল, দেশের একাধিক নামকরা ব্র্যান্ডের শোরুম, মোবাইল মার্কেট প্রভৃতি। বাদুড়ের সঙ্গে নামকরণ করে পাশেই গড়ে উঠেছে ‘বাদুড় মার্কা’ আটা-ময়দার কারখানা। জমির মালিকপক্ষ ইউছুপ আলী জোয়ার্দ্দারের নাতি জাহিদ জোয়ার্দ্দার বলেন, এই বাগানে অনেক আমসহ অনেক গাছ ছিল। সেগুলো আমাদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে কাটা হয়েছে। কিন্তু বাদুড়ের কারণে আমরা এই তেঁতুল গাছগুলো কাটিনি। আমার নানা ইউসুপ আলী জোয়ার্দ্দার ছিলেন বাদুড়ের প্রতি খুব যত্নশীল। গরমে বৃষ্টির অভাবে যখন বাদুড়ের কষ্ট হয়েছে তখন তিনি পানি ছিটিয়েছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সন্তানের মতো করে আগলে রেখেছি বাদুড়গুলোকে। বাদুড়তলায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিকম প্লাসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রিপন বলেন, বাদুড় আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। আমরা বাদুড়তলা বলেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দেই। বাদুড়গুলোর জন্যই আমাদের এই এলাকাটি বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। বাদুড়তলা বললেই সবাই খুব সহজে চিনতে পারে। বাদুড়তলায় অবস্থিত হোটেল ভিআইপি ও রেড চিলি রেস্টুরেন্টের প্রধান শেফ হাসান মাহাদি বলেন, আমাদের হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বাইরে থেকে যেসব গেস্ট আসেন তারা খুব উৎসাহ নিয়ে বাদুড়গুলো দেখেন, ছবি তোলেন এবং ভিডিও করেন। আমি চার বছর এখানে আছি। কখনো বাদুড়গুলো আমাদের কোনো সমস্যা করেনি। বরং বাদুড়গুলোর জন্যই গেস্টদের আগ্রহ আরো বাড়ে। বাদুড়তলার বাসিন্দা আয়ুব মল্লিক বলেন, আমি ছোট থেকে বাদুড়গুলো দেখেই বড় হয়েছি। বাপ-দাদার মুখে শুনেছি প্রায় ২০০ বছর ধরে তাদের বসবাস এখানে। আমরা কখনো তাদের ক্ষতি করি না। বাদুড়গুলোও কারও ক্ষতি করে না। যদি কেউ তেঁতুল পাড়ার জন্যও গাছে ঢিল মারে আমরা স্থানীয়রা সবাই তাকে বাঁধা দেই। বাদুড়গুলো এখন খাবারের কষ্ট পায় বেশি। সন্ধ্যা হলেই সবাই দলবেঁধে উড়ে চলে যায় খাবারের সন্ধানে আবার ভোর বেলা সবাই ফেরত আসে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাদুড় একটি নিশাচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা রাতের বেলা বিভিন্ন গাছে গাছে উড়ে ফল খেয়ে পরাগায়নে সহায়তা করে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকে। চুয়াডাঙ্গাতে মধু মিয়ার চারটি তেঁতুল গাছে ৩ হাজারের বেশি বাদুড় আছে। বাদুড় পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এজন্য আমাদের উচিত বাদুড়গুলো সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।