বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকালে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এরপর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, বিজিবি সদর দপ্তরে কর্মরত সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের উপস্থিতিতে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত চৌকস দল ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। উল্লেখ্য, খুব ভোরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক অংশগ্রহণ করেন।
দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ফজর নামাজের পর পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের মসজিদসমূহে জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শাহাদতবরণকারী সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মার শান্তি এবং বিজিবি’র উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও একাত্মতা কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পিলখানাস্থ কেন্দ্রীয় মসজিদে বিজিবি মহাপরিচালকসহ বিজিবি’র সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় বিজিবি সদস্যদের মাঝে উন্নতমানের ইফতারী ও খাবার পরিবেশন করা হয়।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সারাদেশে বিজিবি’র বিভিন্ন স্থাপনায় ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। বিজিবি সদর দপ্তর, পিলখানাস্থ সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সকলের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫’র ১৫ই আগস্ট শাহাদতবরণকারী তাঁর পরিবারের সকল সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদ এবং বিজিবি’র ২জন বীরশ্রেষ্ঠসহ আত্মোৎসর্গকারী ৮১৭ জন বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আজ বাঙালি জাতির জন্য একটা গর্বের দিন। আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিজিবি’র মতো ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনীর জন্যও দিনটি অত্যন্ত গর্বের। সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই মহান বাণী আপামর জনসাধারণকে জাগ্রত করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা।
বিজিবি মহাপরিচালক আরো বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান সংকট সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য অগ্রযাত্রায় সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পবিত্র রমজান মাসে সংযম পালন, ব্যয় সংকোচন ও কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এবার গণভবনে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই কৃচ্ছ্রসাধন নীতির সাথে একাত্মতা পোষণ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)ও পিলখানয় অনুষ্ঠিতব্য ইফতার পার্টি স্থগিত করেছে এবং মাসব্যাপী গরিব ও দুস্থদের মাঝে ইফতারী বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বিজিবি আজ সারাদেশে ১০টি শহরের গরিব ও দুস্থদের মাঝে ইফতারি বিতরণ করেছে। শুধু রমজান মাসেই নয়, বিজিবির এই মহতী উদ্যোগ সারা বছরব্যাপী চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।
বিজিবি মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সবসময়ই অগ্রভাগে থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিজিবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে-এটাই হোক আজকের দিনের শপথ। তিনি ব্যক্তি স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণে এবং বিজিবি’র সমৃদ্ধি ও সুনাম বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল, বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ও আখাউড়া-আগরতলা আইসিপিসমূহে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ কর্তৃক জমকালো যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি’ প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি’ প্যারেডে বিজিবি-বিএসএফ এর কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় দর্শনার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন। দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিশুদের জন্য বিজিবি জাদুঘর উম্মুক্ত রাখা হয়। সন্ধ্যার পর পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে সীমিত আকারে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।
এর আগে ২৫ মার্চ ২০২৩ তারিখ গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর জঘন্যতম নারকীয় গণহত্যাকান্ডে নিহত শহীদদের স্মরণ ও তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে এশার নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয় এবং জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাত সাড়ে ১০ থেকে ১০.৩১ মিনিট পর্যন্ত ০১ মিনিট বিজিবি সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিটে প্রতীকী ব্লাক আউট’ কর্মসূচি পালন করা হয়।