ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুশ্চিন্তায় তাঁত ব্যবসায়ীরা

ক্রেতাশূন্য শাহজাদপুরের বিখ্যাত কাপড়ের হাট

ক্রেতাশূন্য শাহজাদপুরের বিখ্যাত কাপড়ের হাট

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বস্ত্র বয়নে সুনাম রয়েছে। বস্ত্র বয়নে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুরের পৌর সদরে অবস্থিত ‘শাহজাদপুর কাপড়ের হাট’ অন্যতম। এই হাটে পাইকারিতে বিক্রি হয় তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রি-পিসসহ নানা ধরনের কাপড়। সপ্তাহে চার দিন শনি, রবি, মঙ্গল ও বুধবারে এ কাপড়ের হাট বসে। শাহজাদপুর একটি শিল্প এলাকা। এখানকার মানুষের মূল জীবিকা কাপড়ের ব্যবসা। শাহজাদপুরের সর্বত্র রয়েছে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। এখানে উৎপাদন করা হয় শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা। শাহজাদপুরের গৌরবময় ঐতিহ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে এখানকার কাপড়ের হাট, যা কি না বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি বড় কাপড়ের মোকাম। এই কাপড়ের হাটই হচ্ছে শাহজাদপুরের অর্থনৈতিক কমকাণ্ডের প্রধান চালিকাশক্তি।

আগে এখানে সপ্তাহে দুই দিন (রোববার ও বুধবার) কাপড়ের হাট বসত। কেনাবেচা না থাকায় এখন সপ্তাহে চার দিন হাট বসে, শনি, রবি, মঙ্গল ও বুধবার। যেন কিছুটা হলেও কিছু কাপড় বিক্রি করা যায়। কিন্তু না ক্রেতার অভাবে চার দিনেও বেচাকেনা হয় না। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে। কাপড়ের পশরা সাজিয়ে বিক্রেতা বসে থাকলেও ক্রেতার অভাবে তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। বাংলাদেশের বিখ্যাত শাহজাদপুরের কাপড়ের হাট এখন ক্রেতাশূন্য।

বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়, রমজানের এক-দুই মাস আগে থেকেই ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে কেনাবেচা নাই বললেই চলে। বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম এই কাপুড়ের হাটে ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারদের সমাগম ঘটত। এখানকার কাপড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।

এখানকার হোটেল, রেস্তোরাঁ দোকানপাট পাইকারদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠত। কিন্তু কাপড়ের হাটে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো লোকসমাগম হয় না। ব্যস্ত থাকে না হোটেল, রেস্তোরাঁ কিংবা দোকানপাট। প্রতি হাটে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। এর ফলে শুধু শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরেই বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮টি শাখা রয়েছে। এই কাপড়ের হাটের কল্যাণে প্রচুর অর্থের লেনদেন চলে ব্যাংকগুলোতে।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব ব্যবসায়ী আসেন, তাদের টাকাণ্ডপয়সা ও খরিদকৃত কাপড়ের নিরাপত্তায় শাহজাদপুরবাসী এবং স্থানীয় প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন। কাজেই তারা বেশ নিরাপদণ্ডনির্ভয়ে কাজ করতে পারেন। শাহজাদপুরে পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক- এমন কী রাজনৈতিক উৎসব অনুষ্ঠানের কমর্সূচি হাটের দিন বাদ দিয়ে করা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, এই হাটে যে বিপুল পরিমাণ কাপড় আমদানি হয়, এর শতকরা ৬০ ভাগ ভারতের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান। শাহজাদপুরের কাপড়ের হাট একটি দশর্নীয় কাপড়ের হাটও বটে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু লোক এই হাট দেখতে আসে। তাই হাটটি শাহজাদপুরে পযর্টন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

এ বিষয়ে তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি আলমাছ আনছারী বলেন, কাপড়ের কাঁচা মাল (সুতা, রংসহ যাবতীয় উপকরণ) মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় কাপড়ের বাজার মূল্য বেশি। সে কারণে নারীরা শাড়ি কাপড়ের পরিবর্তে থ্রি পেছের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। ফলে কেনাবেচা অনেকটা কমে গেছে। এদিকে ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে বিদেশি পাইকাররা হাটে এসে কাপড় কিনতে পারছে না। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, শাহজাদপুর কাপড়ের হাট দেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কাপড়ের হাট। এখানে দেশ-বিদেশের বেপারীরা কাপড় কিনতে আসেন। ঈদের এখনো অনেক সময় হাতে থাকায় ক্রেতা সমাগম কম। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরাদমে কেনাবেচা জমে উঠবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত