সুসংবাদ প্রতিদিন

মেহেরপুরে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে সজনে ডাঁটা

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা। আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি, খোকা কবে তুই আসবি? কবে তোর ছুটি? কবির কবিতার লাইন বর্তমানে গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপে মেহেরপুরে ফুটে উঠেছে। চৈত্র মাস এলেই ছেলেকে সজনের ডাঁটা খাওয়ানোর জন্য এখনো অনেক মা এভাবেই অপেক্ষা করে। মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সজনে গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সজনে ডাঁটা। প্রতিটি সজনে গাছের ডাল নুয়ে পড়ছে ডাঁটার ভারে। শীতের শেষে গরমে মেহেরপুরে এখনো মৌসুমি ও সুস্বাদু সবজি সজনের ডাঁটার জনপ্রিয়তা কমেনি। বহুগুণে গুণান্বিত সজনে ডাঁটা। মেহেরপুর জেলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় সজনের গাছ আছে। বাজার দাম এবং চাহিদার কারণে অনেকে এখন সজনে ডাঁটা চাষ করছে। সবজি হিসেবে অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনের ডাঁটা চাষ অনেক লাভজনক। বাড়ির আনাচে-কানাছে বা পতিত জমিতে এ গাছ লাগিয়ে চাষ করা যায়। এ মৌসুমে সবচেয়ে মুখরোচক, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তরকারি বলতে সজনে ডাঁটা। বর্তমানে কাঁচাবাজার তালিকায় সজিনা ডাটা নেই এমন ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। এবার প্রতিটি গাছেই সজনের ডাঁটা দোল খাচ্ছে। সকলেই নিজের চাহিদা পূরণের পরও ডাঁটা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে। ফুল থেকে লকলকে কচি ডাঁটা যখন বাজারে ওঠে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে ডাঁটা যখন পরিপূর্ণ বাজারে আসে তখন দাম কমে যায়। বর্তমানে বাজারে এখন ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসেছে প্রচুর। সজিনা উৎপাদনে চাষিদের কোন খরচ হয় না। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজিনা ডাঁটা উৎপাদন হয় তার সবটুকুই চাষির লাভ।

জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজিনার গাছ আছে তার সঠিক হিসেব কৃষি বিভাগের নেই। মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের সজনে চাষি মিন্টু মিয়া জানান- বাণিজ্যিকভাবে মাঠে কোন জমিতে সজনে চাষ করেন না। তার বাড়ির চার পাশে ১০টি সজনে গাছ লাগিয়েছেন। এ গাছ লাগাতে কোনো খরচ হয়নি তার। তিনি প্রতি মৌসুমে ৬-৭ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করে থাকেন। এবার গাছে যে পরিমাণ ডাঁটা ধরেছে তাতে তিনি আশাবাদী ১০ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করবেন। একই গ্রামের আর এক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান- এখন সজিনা গাছে থোকায় থোকায় ডাঁটা ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও গাছ ডাঁটায় পরিপূর্ণ। তিনি মূলত নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছেন। তবে যে পরিমাণে সজিনা ডাঁটা ধরেছে তা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ৭-৮ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করবেন। তিনি আরও জানান- সজিনা চাষে কোনো খরচ হয় না। গাছের ডাল লাগালেই হয়। ডাল লাগানোর পর কয়েকদিন গোড়ায় পানি দিলেই মাটিতে গাছ লেগে যায়। তবে সজিনার প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। ঝড়ে যদি ডাল ভেঙে যায় এমনকি গাছ উপড়ে পড়ে। সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম জানান- আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় সজিনা গাছ আছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শংকর কুমার মজুমদার জানান- দেশে সজনে সচরাচর দু’ধরনের হয়ে থাকে। মৌসুমি এবং বারোমাসি। মেহেরপুরে আগে বারোমাসি জাতের সজনে আবাদ কম হলে ও এখন বারোমাসি সজিনার চাষ বেড়েছে। কৃষদের মাঝে সজিনা চারা বিতরণ করে সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।