উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের জন্য জাতীয় সম্মান হিসেবে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA) কর্তৃক ২০১৯ সাল থেকে দেশের উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের জন্য সর্ববৃহৎ এই উদ্যোগ ‘বিগ’ আয়োজন করা হচ্ছে। এরই আলোকে এবছর বিগ ২০২৩-এর উদ্বোধনী গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো. আলতাফ হোসেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি দেশের সমস্যাগুলোর প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান দিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় তরুণ উদ্ভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন আমাদের তরুণদের মেধার ঘাটতি নেই, তাদের প্রয়োজন সহযোগিতা। বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টের মাধ্যমে আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি। আমাদের তরুণ উদ্ভাবকরা শুধু দেশের নয় বিশ্বের সমস্যাও সমাধান করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য আমরা আইডিয়া প্রকল্প চালু ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছি। এ প্রতিষ্ঠান সমূহের মাধ্যমে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে। পাশাপাশি আগামীতে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় হাব-এ পরিণত হবে। তিনি আরো বলেন ভারত-সিঙ্গাপুরের মধ্য থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোকে ৮০০ মিলিয়নের ওপর বিনিয়োগ এসেছে। স্টার্টআপ ধীরে ধীরে ওঠে না; রকেটের গতিতে ওঠে। বিকাশ, নগদ ও শপআপ এরই মধ্যে বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন যে, তরুণদের সংখ্যায় বিশ্বের মধ্যে আমরা এগিয়ে রয়েছি। একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে তরুণদের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বিগ অনুদান পেয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সোপান বা পদক্ষেপ তৈরি করতে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এই ইনোভেশন গ্র্যান্টের মাধ্যমে যারা বিজয়ী হবেন তারা আমাদের দেশকে তাদের নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলেও তিনি আশা ব্যাক্ত করেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বিগত কয়েক বছর ধরে স্টার্টআপদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পণ পর্যায়ে উদিয়মান স্টার্টআপদের অবদান অনস্বীকার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলদেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি স্টার্টআপদের অনুপ্রাণিত করে বলেন, বিগ থেকে স্টার্টআপদের নেটওয়ার্কিং ও ফিডব্যাক পাবার সুযোগ থাকে যেগুলো স্টার্টআপদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবশেষে তিনি দেশের সব উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক এবং স্টার্টআপদের বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানটির সভাপতির বক্তব্যে আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো. আলতাফ হোসেন সবাইকে ডিজিটাল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিগ একটি চমৎকার উদ্যোগ। বিগ সব উচ্চাকাক্সক্ষী উদ্যোক্তা বা স্টার্টআপদের জন্য একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করবে। অনুষ্ঠানে বিগ ২০২৩-এর ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিগ ২০২৩-এর মূখ্য সমন্বয়ক ও আইডিয়া প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক সিদ্ধার্থ গোস্বামী। এছাড়া, আইডিয়া প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও উপসচিব ড. মো. মিজানুর রহমান, বিগ ২০২৩-এর সহযোগী সমন্বয়ক ও আইডিয়া প্রকল্পের কমিউনিকেশন্স বিষয়ক পরামর্শক সোহাগ চন্দ্র দাস, আইডিয়া প্রকল্পের পরামর্শক ও বিগ ২০২৩-এর টেকনোলজি বিষয়ক সহযোগী সমন্বয়ক আবুল কালাম এহসানুল আজাদ, মানবসম্পদ বিষয়ক পরামর্শক মো. নাজিম উদ্দিনসহ আইসিটি বিভাগ, বিসিসি ও অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর তর্জনী বাঙালির কাছে যেমন স্বাধীনতার নির্দেশক, ঠিক একইভাবে নতুন প্রজন্ম স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তাদের কাছে ‘বিগ’ হলো সফলতা ও নির্ভীকতার এক অনন্য অনুপ্রেরণার উৎস। জাতীয় পর্যায়ে আগামী ২২ এপ্রিল ২০২৩, শনিবারের মধ্যে যে কোনো তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্যোক্তা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। প্রাপ্ত আবেদনসমূহের মধ্য থেকে ৩০০টি উদ্ভাবনী স্টার্টআপকে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিগ কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীতে, নির্বাচিত সেরা স্টার্টআপদের নিয়ে একটি ৩ দিনব্যাপী বুটক্যাম্প আয়োজন করা হবে। এ বুটক্যাম্পে স্টার্টআপদের নিয়ে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ, মেন্টরিং, পিচিং ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বুটক্যাম্পের সেরা স্টার্টআপদের থেকে নির্বাচন করা হবে ‘বিগ ২০২৩’ এর সেরা ৫১ স্টার্টআপ যাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত সেরা ৫টি স্টার্টআপকে নিয়ে আয়োজিত হবে বিগ এর চূড়ান্ত রাউন্ড। এই চূড়ান্ত পর্ব থেকে অভিজ্ঞ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিলেকশন প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে বৃহৎ এই আয়োজনের চূড়ান্ত ফলাফল। ‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২৩’ এর পুরস্কার হিসেবে সেরা একটি স্টার্টআপকে দেয়া হবে বিশেষ সম্মাননা এবং গ্র্যান্ট হিসেবে ১ কোটি টাকা অনুদান। বাকি নির্বাচিত তালিকার সেরা ৫০ স্টার্টআপের প্রত্যেককে দেয়া হবে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান। এছাড়া, স্টার্টআপদের জন্য রয়েছে বিনিয়োগ পাবার সুবিধাসহ নানা সুযোগ। অর্থাৎ সেরা ৫১টি স্টার্টআপকে মোট ৬ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, বিগ ২০২৩-এর সেরা ৫১টি স্টার্টআপকেই দেয়া হবে বিশেষ সম্মাননা সনদ। বিগ সর্বপ্রথম ২০১৯ সালে স্টার্টআপদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর ২০২১ সালে সফলভাবে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়। এরই পারিপ্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালে উক্ত জনপ্রিয় আয়োজনটি তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘DARE TO STAND BIG’। ‘বিগ ২০২৩’ আয়োজনকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তায় রয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বিসিসি, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, এটুআই, এনহেনসিং ডিজিটাল গভার্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনোমি (ইডিজিই) প্রকল্প এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প। নিবন্ধন ও বিগ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে হবে www.big.gov.bd এই ওয়েবসাইটে।