জবির ছাত্রী হলে এক পিস গরুর মাংস ৯০ টাকা

খাবারের মান বাড়েনি

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আহনাফ ফাইয়াজ, জবি

রমজান উপলক্ষ্যে সাহরিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলে এক পিস গরু মাংস ও এর সঙ্গে দুই পিস আলুর দাম ৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে হল ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ, যা গত বছরের রমজানে ৬০ টাকা ছিল। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এদিকে খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি বলেও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।

সাহরিতে হলের মূল্য তালিকা থেকে জানা যায়, রোজা উপলক্ষ্যে এক পিস গরুর মাংসের সঙ্গে দুই পিস আলুর দাম ৯০ টাকা, আগে ব্রয়লার মুরগি ৩০ টাকা হলেও রোজায় পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তালিকায় দেশি মুরগির দাম ৫০ টাকা, মাছ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ভর্তা-ভাজি ১০ টাকা, আর ভাত ১০ টাকা করে।

সাহরিতে একজন শিক্ষার্থী শুধু গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেতে হলে গুনতে হবে ১০০ টাকা, আর ব্রয়লার মুরগি কিংবা মাছ দিয়ে ভাত খেতে হলে গুনতে হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া খাবারের তালিকায় আমিষের পাশাপাশি সবজি রাখতে হলে এ টাকা আরো বাড়বে। এদিকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনে ভাত আনলিমিটেড থাকলেও এখানে প্রতিবার ১০ টাকা করে ভাত কিনে খেতে হয়।

পুষ্টিবিদদের গবেষণা বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীরা দৈনিক যে খাবার খান, তাতে পুষ্টির পরিমাণ গড়ে ১ হাজার ৮২১ কিলোক্যালরি। অথচ পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর দিনে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার কিলো ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত।

একজন সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় ও পরিমাণ মতো ছয়টি উপাদানযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, যা পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি গ্রহণ করলে দেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়। এজন্য একজন পূর্ণবয়স্ক শিক্ষার্থীর দৈনিক সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয় সাধারণত ১ হাজার ৩০০ গ্রাম। সেটা হতে পারে- ভাত ২৫০ গ্রাম, আলু ভাজি ১০০ গ্রাম, ছোট মাছ ৮০ গ্রাম, শাকসবজি ২৫০ গ্রাম, ফল ২৫০ গ্রাম, মাংস ৫০ গ্রাম, চিনি-গুড় ২০ গ্রাম, দুধ ৩০০ গ্রাম। সেখানে হলের খাবার তালিকায় থাকে ছোট্ট এক টুকরো মাংস কিংবা মাছ।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আনিকা (ছদ্মনাম) বলেন, যদি মুরগি, সবজি দিয়েও খাই তাহলে ৫৫ টাকা লাগে। রাতে আর সাহরিতে খেলে ১১০ থেকে ১২০ টাকা লাগবে। আর সুষম খাদ্য খেতে হলে দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা গুনতে হবে, যা হলে বসবাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অসম্ভব।

এক পিস গরুর মাংসের দাম ৯০ টাকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আফরিন (ছদ্মনাম) বলেন, শুধুমাত্র এক পিস মাংস আর দুটি আলু দিয়ে এত দাম কীভাবে রাখা হয়? গত রোজায় এ দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ছিল। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে ঠিক আছে, কিন্তু হল আর বাইরের দোকানের মধ্যে তাহলে আর পার্থক্য তো থাকল না। এদিকে হলের খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি বলে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবাসিক একজন ছাত্রী বলেন, খাবারের দাম টুকটাক বাড়লেও মান আগের মতোই রয়েছে। সাহরিতে নিজের রান্না করতে কষ্ট হয়, তাই না পারতে হল ক্যান্টিনে খাই।

হল ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক নিগার সুলতানা বলেন, গরু মাংসের দামের বিষয়টি খতিয়ে দেখব। খাবারের মানের বিষয়ে নিগার সুলতানা বলেন, খাবারের মান ঠিক রাখার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত তদারকি করছি।