ঢাকা ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাহাড়ের মাটিচাপায় তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু

কক্সবাজারে সারা বছর চলছে পাহাড় কাটার উৎসব

জড়িত বনকর্মী, প্রভাবশালী ভূমিদস্যু দল
কক্সবাজারে সারা বছর চলছে পাহাড় কাটার উৎসব

কক্সবাজারে সারা বছর জুড়েই পুরোদমে চলছে পাহাড় নিধনযজ্ঞ। নির্বিচারে পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যু দল। এ কাজে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

এদিকে পরিবেশ বিধ্বংসী এ পাহাড় কাটা রোধে চোখে পড়ার মতো প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে দ্বিগুণ উৎসাহে কক্সবাজার জেলাজুড়েই শত শত পাহাড় দিনে-দুপুরে কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।

গতকাল বুধবার ভোরে উখিয়ায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে তিন রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১-ওয়েস্ট সি-১৪ এর বাসিন্দা আব্দুল মোতালেবের ছেলে জাহিদ হোসেন (২৩), ১৯ নম্বর ক্যাম্পের ১-ওয়েস্ট ব্লক-বি-৭’র বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়ারেসের ছেলে ছৈয়দ আকবর (২০) ও ক্যাম্প-১৭ এর ব্লক-এইচের সুলতান আহমদের ছেলে নুরুল কবির (৩০)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, মুহুরীপাড়া এলাকার নেছার আহমদের বাড়ির পাহাড় কেটে সমতল করার কাজ করছিল একদল রোহিঙ্গা শ্রমিক। মাটি কাটার এক পর্যায়ে উপরে থাকা নেছার আহমেদের বাড়ির আঙ্গিনা অংশের পাহাড় ধসে পড়লে কর্মরত তিন শ্রমিক মাটিতে চাপা পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা একজনকে মৃত উদ্ধার করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আরো দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভেল ডিফেন্সের স্টেশন ইনচার্জ এমদাদুল হক জানান, দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করার পর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ছৈয়দ আকবরের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ঘটনাস্থলে কান্নারত ছৈয়দ আকবরের মা রাবেয়া বসরী জানান, মঙ্গলবার কাজের সন্ধানে নিজের ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, নিহতদের লাশ উখিয়া থানায় নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

একইভাবে উখিয়া উপজেলার পাইন্যাশিয়া, ফলিয়াপাড়া, ইনানী, পাটুয়ারটেক, নিদানিয়া, সোনারপাড়া, চোয়াংখালী, মোহামদ শফির বিল, মনখালী, থাইংখালী, বাঘঘোনা, পালংখালী, মুহুরীপাড়া, ভালুকিয়া, হলদিয়া, হাতিরঘোনা, লম্বাশিয়া, লম্বাঘোনা, মধুরছাড়া, মাছকারিয়াসহ পাঁচটি ইউনিয়নের ৩০টির বেশি স্থানে পাহাড় কাটা চলছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, ইসলামপুর, বাঁচামিয়ার ঘোনা, ইসুলু ঘোনা, বৈদ্যঘোনা, খাজা মঞ্জিল এলাকা, বাদশা ঘোনা, ফাতের ঘোনা, ঘোনার পাড়া, লাইট হাউস পাড়া, কলাতলী, বাইপাস সড়কের দুই পাশ, নতুন জেলা কারাগার সংলগ্ন এলাকা, নতুন পুলিশ লাইন সংলগ্ন এলাকা, লারপাড়া, উত্তরণ এলাকা, হাজী পাড়া, সদর উপজেলার পেছনে, সাহিত্যিকা পল্লী, বিজিবি ক্যাম্পের পেছনে, পল্লান পাড়া, সমিতি বাজার, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়াসহ পুরো শহরজুড়েই চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকায় পাহাড়ের পর পাহাড় কেটে বসত বাড়ি নির্মাণ ও অসংখ্য রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠছে। অথচ প্রশাসন সব দেখেও না দেখার ভান করছে।

সূত্র মতে, রাতের আধারে প্রভাবশালী মহল শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কেটে সমতল করে। পরে দিনের বেলায় ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হয়। পাহাড় কাটা রোধে প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় জেলাজুড়ে এ কৌশল অবলম্বন করে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় পাহাড় কেটে মাটি মজুত করে রাখা হতো।

পরে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মাটি ভাসিয়ে দেয়া হয়। এতে শহরের নিচু এলাকার সড়ক ও নালা ভরাট হয়ে পড়ে। এছাড়াও নিচু এলাকার লোকজন বিভিন্ন ক্ষয় ক্ষতিসহ নানা দুর্ভোগের শিকার হয়। তবে এখন আর বর্ষাকালে নয়, সারাবছরজুড়েই পাহাড় কাটা হয় জেলাজুড়ে।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, কক্সবাজারে এখন বাধাহীনভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। কক্সবাজারে ৫০০-এর অধিক স্থানে বর্তমানে পাহাড় কাটা চলছে।

এছাড়া অর্ধসহস্রাধিক ডাম্প ট্রাক নিয়ে প্রকাশ্যে নির্বিচারে চলছে পাহাড় নিধন। পাহাড় কাটার এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখলে মনে হবে, এসব বন্ধে কোন প্রশাসন নেই।’ কক্সবাজারের পাহাড় কাটা বন্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালানোর দাবি জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় কাটছে বলে খবর আসছে। এরই মধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত