সরকারি চাকরি করেও কেবল মাত্র প্রধান মন্ত্রীর-‘এক ইঞ্চি মাটি পতিত রাখা যাবে না’, এ বক্তব্যে অনুপ্রাণীত হয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে এলাকায় আলোড়ন স্মৃষ্টি করেছে তরুণী শারমিন সুলতানা রাকা। ওই তরুণী তার জমানো টাকা দিয়ে গ্রামে নিজের আড়াই বিঘা এবং অন্যের পতিত থাকা আরো সাড়ে ৪ বিঘা জমি এগ্রিমেন্ট (চুক্তিতে ভাড়া) নিয়ে মোট ৭ বিঘা জমি লাভজনক ফসল ভুট্টার আবাদ করেছে। ফলনও হয়েছে বেশ। তাই দেখে এলাকার কৃষকরা বাহবা দিচ্ছে এবং তার আবাদকৃত ভুট্টা ক্ষেত দেখতে আসছে অনেকেই। শেরপুর সদর উপজেলার চর মোচারিয়া ইউনিয়নের নলবাইত গ্রামের রফিকুল ইসলাম রঞ্জুর কন্যা শারমিন সুলতানা রাকা শেরপুর সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। পাশপাশি সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে চাকরি হয়েছেন। রাকা তার পারিবারিক অর্থনৈতিক দৈন্যতা কাটাতে অনেক আগে থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়াতেন এবং চাকরি খুঁজে আসছিলেন। সম্প্রতি তার এ চাকরি হওয়ায় একটু নিঃশ্বাস ফেলেছে। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি। চাকরির কারণে সে যখন তার ইউনিয়নের মাঠে-প্রান্তরে ছুটে চলেন তখন খেয়াল করতেন তাদের গ্রাম এবং আশপাশের অসংখ্য জমি পতিত রয়েছে। এদিকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য তাকে উদ্বুদ্ধ করে। তা হলো, ‘এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না।’ সেই থেকেই রাকা সিদ্ধান্ত নেয় নিজেকে চাকরির পাশপাশি অফিস সময়ের পর কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। তাই তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো, কিছু পর্বের জমানো এবং কিছু তার নানার সহযোগিতায় তাদের নিজেদের আড়াই বিঘা এবং অন্যের আরো সাড়ে ৪ বিঘা জমি এগ্রিমেন্ট (চুক্তিতে ভাড়া)সহ মোট ৭ একর জমিতে অধিক লাভের ফসল ভুট্টার আবাদ শুরু করেছে। গত ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা ভুট্টা আগামী মে মাসের শুরুতেই উঠাতে পারবে। বর্তমানে ভুট্টার ফলনও চলে আসছে। বাম্পার ফলনের আশাও করছে সে।
এ বিষয়ে শারমিন সুলতানা রাকা জানায়, পড়াশোনার পাশাপাশি আমি নিজে শহরের বিভিন্ন বাড়িতে প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা এবং কিছুদিন অনলাইনে ড্রেসের ব্যবসা করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। গত নভেম্বর মাসে আমার চাকরিটা হওয়ার পর চাকরির কাজে গ্রামের বাড়ি বাড়ি যেতে হয়। এ সময় আমি দেখলাম গ্রামের অনেক জমি পতিত থাকে। আমাদেরও কিছু জমি পতিত ছিলো। তাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আমিও উদ্বুদ্ধ হলাম গ্রামের কোনো জমি যেন পতিত না থাকে। তাই নিজেই প্রথম শুরু করলাম কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে। আমার আবাদকৃত ভুট্টার ফলন দেখে অনেকেই উৎসাহ জোগাচ্ছে, কেউবা আবার নিজে চাষ করার জন্য পরামর্শ নিচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগও আমাকে সহযোগিতা করেছে। শুরুতে সরকারি প্রণোদনার কিছু ভুট্টা বীজ পেয়েছি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও পেয়ে যাচ্ছি। ধানের চেয়ে এ ভুট্টা আবাদ অনেক লাভজনক বলেই আমি এতে ঝুঁকেছি। আগামীতে আমার ইচ্ছা আছে ভুট্টার পাশাপাশি লাভজনক আরো নতুন কিছু চাষাবাদ করার। এবার আমার ৭ বিঘা জমিতে এ পর্যন্ত রোপণ করা, শ্রমিক খরচ ও সারসহ অন্যান্য খরচ পড়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। এ জমি থেকে আমি ফলন আশা করছি বিঘা প্রতি ৩০ মণ ভুট্টা। বাজার মূল্য এক হাজার দুই শত টাকা মণ হিসেবে ৭ বিঘা জমির ২১০ মণ ভুট্টা বিক্রি করতে পারব প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এতে তার প্রায় দ্বিগুণ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছে।
এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহানারা বেগম জানায়, রাকা আমাদের অফিস থেকে প্রণোদনার ভুট্টা বীজ নিয়ে ভুট্টার আবাদ করেছে। এরইমধ্যে ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তার মতো সাহস করে গ্রামের অন্যরাও এগিয়ে এলে গ্রামের কোনো জমি পতিত থাকবে না।