ঢাকা ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডোবায় মিলল মরদেহ

চট্টগ্রামে ধর্ষণের পর ১০ বছর বয়সি শিশু হত্যা

চট্টগ্রামে ধর্ষণের পর ১০ বছর বয়সি শিশু হত্যা

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় ধর্ষণের পর ১০ বছর বয়সি এক শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিখোঁজের ৮ দিনের মাথায় গতকাল ভোরে আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) নামে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পাহাড়তলী থানার কাছে আব্দুর কাজীর দিঘীরপাড়া এলাকার ডোবায় তার মরদেহের সন্ধান মেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সবজি বিক্রেতা রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধর্ষণের পর শিশু আয়নীকে হত্যা করা হয়েছে। নিখোঁজের পর ভুক্তভোগী শিশুর মা বিবি ফাতেমা তার সন্তানকে উদ্ধারে একাধিকবার পাহাড়তলী থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। থানায় উপস্থিত হয়ে ফাতেমা আসামি মো. রুবেল (৩৫) তার সন্তানকে নিয়ে গেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার অভিযোগ পাত্তা দেয়নি পুলিশ। অনুরোধ করার পরও মামলাও নেয়নি পাহাড়তলী থানা পুলিশ। নিরুপায় হয়ে শিশুর মা আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত অভিযোগ শুনে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ এখনো থানায় এসে পৌঁছেনি। এরই মধ্যে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা পিবিআই শিশু আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানা পুলিশের কাছে কোনো প্রতিকার না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিশুর মা চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। পিবিআই কর্মকর্তারা অভিযোগ শোনার পর যাচাই-বাছাই করে মঙ্গলবার অভিযুক্ত রুবেলকে হেফাজতে নেয়। এরপর তাকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনোভাবে মুখ খুলছিলেন না রুবেল। পিবিআই কর্মকর্তাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে ভোর রাতে মুখ খোলেন রুবেল। পুলিশকে রুবেল বলে শিশু আয়নীকে তিনিই হত্যা করেছেন। বস্তায় ভরে তার লাশ ফেলে দেন পাশের ডোবায়। সাথে সাথে তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা আয়নীর লাশ উদ্ধার করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, লাশ উদ্ধারের সময় গতকাল ভোরে পাহাড়তলী থানার আব্দুর কাজীর দিঘীরপাড়া এলাকায় বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো হন। ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগীর শিশুর মা এবং তার নিকটাত্মীয়রাও আসেন। তারা সবাই অভিযুক্ত রুবেলের ফাঁসি দাবি করেন।

এসময় ভুক্তভোগী শিশুর মা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম, রুবেল আমার শিশুকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা উল্টো আমাকে বলে রুবেল নাকি ভালো ছেলে। রুবেল এ কাজ করতে পারে না। তোমার মেয়ে প্রেম করে। আমার ১০ বছরের মেয়ে কীভাবে প্রেম করে। আপনারা বলেন? এখন আমার বুক খালি হয়ে গেল। আমার মেয়ের কাপড় পরবে কে? বেতন পেলে আমার মেয়েকে মিষ্টি-সন্দেশ কিনে দিতাম। এখন কাকে কিনে দেব? আমার একমাত্র মেয়েকে রুবেল এভাবে হত্যা করল।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা বলেন, শিশু আয়নীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত রুবেলকে আটক করা হয়েছে। শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আদালত সূত্র জানায়, শিশু আয়নীকে অপহরণের অভিযোগে মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ শরমিন জাহানের আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর মা। এতে একমাত্র আসামি করা হয় মো. রুবেল (৩৫) নামের একজনকে। তার বাড়ি নগরের পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকায়। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ভুক্তভোগী শিশু নগরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার মা এবং বাবা দুজনই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

গত ২১ মার্চ ভুক্তভোগী শিশু স্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘটনার দিন এবং তার আগের দিন ভুক্তভোগীকে মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

এদিন আদালত অভিযোগ শুনে মামলাটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন।

বিড়াল ছানার প্রতি লোভই কাল হলো : পাহাড়তলী থানা এলাকার আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) বিড়াল ছানার প্রতি ছিল যার প্রচণ্ড লোভ। কেউ বিড়াল ছানা দেবে বলে ডাকলেই ছুটে যেত চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি। আর এ সুযোগই কাজে লাগান সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল (৩৫)। কৌশলে আয়নীকে ডেকে এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। তারপর ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গলা টিপে হত্যা করা হয় আয়নীকে। রুবেলকে আটক ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব তথ্য দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।

পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ২১ মার্চ বিড়াল ছানা দেবে বলে আয়নীকে দেখা করতে বলেন রুবেল। এরপর তাকে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় নিজের ফুফুর বাসায় নিয়ে যান। বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর ঘটনা জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় আয়নীকে গলা টিপে হত্যা করেন রুবেল। পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় একটি বলাৎকারের ঘটনা জানাজানি হয়। এটিও এরকমভাবেই জানাজানি হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় রুবেল শিশু আয়নীকে হত্যা করেন। বিকালে হত্যার পর ওইদিন রাতে আয়নীর মরদেহ বস্তায় ভরে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেয়া হয়। রুবেলের দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক গতকাল ভোরে আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত