কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবাসিক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থী ১৪ দিনেও কারণ দর্শানোর জবাব দেয়নি। জবাব না দেয়ার কারণ হিসেবে তারা দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
জানা যায়, গত ৪ মার্চ ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৫ মার্চের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দিতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান জবাব দেন। অপরদিকে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার উর্মি জবাব না দিয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করে। একইসঙ্গে তারা আবেদনে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি চেয়েছেন। আবেদনের পর তিন অভিযুক্তের আবেদন সংক্রান্ত ফাইল রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা হয়। নিয়মানুযায়ী ফাইল চলে যায় একাডেমি শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানের কাছে। তিনি দেখে ফাইলটি পাঠিয়ে দেন রেজিস্ট্রার দপ্তরে। রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে মতামতের জন্য ফাইল গত ১৪ মার্চ আইন প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ওখানে ফাইলটি গিয়ে আটকে যায়।
আইন প্রশাসক সিদ্ধান্ত দিলে ফাইলটি সচল হয়ে আসবে উপাচার্যের কার্যালয়ে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে উপাচার্যের কার্যালয় ঘুরে ফাইল আসবে একাডেমি শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানের কাছে। তবে ১৪ দিনেও ফাইলটি সচল না হওয়াকে একধরনের প্রশাসনিক হয়রানি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
অভিযুক্তদের দাবি, আমরা পনেরো দিন আগে আবেদন দিলেও এখনও প্রশাসন আমাদের এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো করণীয় জানায়নি। তাই আমরা কারণ দর্শানো জবাব দিতে পারছি না। আমরা সুনির্দিষ্ট জবাব পেলে, পরবর্তীতে জবাব দিয়ে দিব।
ফাইল সংশ্লিষ্টদের দাবি, যখনই অভিযুক্তরা আবেদন দেয়, তখনই ১৫ মার্চের মধ্যে প্রশাসনের জবাব দেয়া উচিত ছিল। তাহলে ওরা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ওদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারত।
অভিযুক্ত আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম বলেন, আমি গত ১৩ মার্চ প্রশাসনের কাছে রিট পিটিশন, শৃঙ্খলা কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কাগজপত্র ও সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাকে পনেরো দিনেও কোনো কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান বলেন, ফাইলটি এতদিন আইন প্রশাসকের দপ্তরে আটকে ছিল। আজকে আমার কাছে এসেছে। আমি উপাচার্যর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। উল্লেখ্য, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গত ১ মার্চ সানজিদা অন্তরাসহ পাঁচ অভিযুক্তকে ক্যাম্পাস থেকে সাময়িক বহিষ্কার, হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার, ভুক্তভোগী ফুলপরীর নিরাপত্তা ও তার পছন্দের হলে উঠানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে সেদিনই হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে প্রশাসন। এছাড়া গত ৪ মার্চ পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে তাদের হল ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।