ঐতিহ্য সংরক্ষণের সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে ব্র্যান্ডিং ও চাহিদা
নাটোরের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্দুর রাজ্জাক লাকী, নাটোর
ঐতিহ্যবাহী নাটোরের কাঁচাগোল্লার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নাটোরের জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিবন্ধনের আবেদন প্রেরণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার তার দপ্তরে নিশ্চিত করেন।
এফিডেভিটের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর নাটোরের কাঁচাগোল্লার আবেদন প্রক্রিয়া প্রেরণ করা হয়েছে। নাটোরের ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা প্রদান করেছে। কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে মজাদার ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানী ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল মিষ্টি। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। একদিন মধুসূদন পালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারী অসুস্থ হয়ে গেল। মিষ্টি তৈরির জন্য ২ মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার সাথে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। কারিগর ছাড়াই এলোমেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দেন রানী ভবানীর রাজবাড়িতে। রানী ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এই হচ্ছে কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস। এই গল্প বেঁচে আছে শত শত বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে। নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়, মুখ্য উপকরণ ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে এক প্রকার সন্দেশ। কাঁচাগোল্লার সাথে জড়িয়ে রয়েছে নাটোরবাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। তাই আজ থেকে ২৫০ বছর আগে কাঁচাগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজো সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় কাঁচাগোল্লা। শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রসিদ্ধ।
জেলা প্রশাসক জানান, নাটোরে সৃষ্টি কাঁচাগোল্লা সারাদেশে প্রসিদ্ধ। ইতিহাস সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে জিআই নিবন্ধনের কাজ শুরু করেছি আমরা। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যে জিআই পণ্যের মর্যাদা লাভ করবে নাটোরের কাঁচাগোল্লা।
জিআই তালিকাভুক্তির মধ্যদিয়ে নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে কাঁচাগোল্লার ব্র্যান্ডিং ও চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।