ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বরিশালে বাদীর বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা!

বরিশালে বাদীর বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা!

জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আদালতে ভূয়া সইমোহরী দাখিলের অভিযোগে মো. খলিলুর রহমান আকন্দ ও মজিবর রহমান আকন্দ নামের দুই সহোদরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন বরিশাল যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শিবলী নোমান খান। মামলা দায়েরর পর অভিযুক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আল ফয়সাল। একজন বিচারক নিজে উদ্যোগী হয়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনায় আদালতপাড়ায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। বিচারকের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন একাধিক আইনজীবী ও বিচারপ্রর্থীসহ অনেকেই। আদালত সূত্র জানায়, বাকেরগঞ্জ থানার পোড়াচিনি গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের দুই পুত্র মো. খলিল আকন্দ ও মো. মজিবর আকন্দ বিগত ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি বরিশাল যুগ্ম জেলা জজ ৩য় আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন যার নম্বর ০২/২২। ওই মামলায় উল্লেখিত দুই সহোদর দাবি করেন তার পিতা জয়নাল আবেদীন ১৯৬১ সালের ২০ আগস্ট মি. এইচসি জেডি সিলভা ও মেরী এসইউ সিলভার নিটক থেকে ৫নং পোড়াচিনি মোৗজার ৫১নং ক্ষতিয়ানের বিভিন্ন দাগের ২.৭১ একর জমি ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত সম্পত্তি জয়নাল আবেদীন বিগত ২০০২ সালের ১০ অক্টোবর তার দুই পূত্র মো. খলিল আকন্দ ও মো. মজিবর আকন্দকে মৌখিক দান করে তা দুই পুত্রকে বুঝাইয়া দেন। তবে নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মৌখিক দানকে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিগত ২৫-০৯-২০২১ ইং তারিখে জয়নাল আবেদীন অপর পুত্র ও কন্যাদ্বয় দুই ভ্রাতা মো. খলিল আকন্দ ও মো. মজিবর আকন্দের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এর পরবর্তিতে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর বাদী-বিবাদীগণ তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে মীমাংসার জন্য একটি আপোষনামা দাখিল করেন। কিন্তু বাদী বিবাদীর দাখিল করা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত ১৯৬১ সালের ২০ অক্টোবরের ৯৩২৬ নং দলিলের সই মোহরী নকল দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু বাদী পক্ষ দলিলের সই মোহরী নকল দাখিল না করে বরিশাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি পরিদর্শন সিøøপ দাখিল করেন। সেখানে জনৈক সার্চার মো. নাছির উদ্দীন তাহার এখতিয়ার বহির্ভূত একখানা প্রতিবেদন দাখিল করে বলেন, ১৯৬১ সালের ৯৪ নং ভলিউম বিনষ্ট হওয়ায় উল্লেখিত দলিলের সই মোহরী দাখিল করা সম্ভব নয়। তবে এখতিয়ার বহির্ভূত প্রতিবেদন দাখিলের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে জনৈক সার্চার মো. নাছির উদ্দীন ভবিষ্যতে এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন বলে আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পান। অতঃপর রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ১৯৬১ সালের ৯৩২৬ নং দলিলের ৯৪ নং ভলিউম তলব করা হলে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে উপস্থাপনকৃত ৯৪ নং ভলিউমটি ছেঁড়া ও অপাঠ্য বলিয়া প্রতীয়মান হয়। কিন্তু ভলিউমটির মুড়িতে ৯৩২৬ নং দলিলটির নিবন্ধন দেখা যায় যার তারিখ ৩০-১০ ১৯৬১ ইং। কিন্তু বাদী পক্ষের দাখিল করা ৯৩২৬ নং দলিলের নিবন্ধনের তারিখ ছিল ২০-০৮-৬১ ইং। পরে উক্ত দলিলের ইনডেক্স ও সই মোহরী নকলের রেজিস্ট্রি তলব করা হলে রেকর্ড কিপার বিধান চন্দ্র সুতার ১৯৬১ সালের ইনডেক্স আদালতে উপস্থাপন করেন যেখানে বাদীর দাখিলকৃত দলিলের নকল সইমোহরটি অস্তিত্বহীন। মিথ্যা তথ্য ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আদালতে ভূয়া সইমোহরী দাখিলের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় বরিশাল যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শিবলী নোমান খান অভিযুক্ত মো. খলিলুর রহমান আকন্দ ও মজিবর রহমান আকন্দ নামের দুই সহোদরের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আল ফয়সাল মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দুই সহোদর মো. খলিলুর রহমান আকন্দ ও মজিবর রহমান আকন্দর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. কামরুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বরিশাল যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার মো. নুরুল বশির মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কথা স্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত