সাম্রাজ্যবাদী দালালরা এখনো ক্রিয়াশীল

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, আজ কোনো কোনো মহল চায়না বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, আজ বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী দালালরা ক্রিয়াশীল, তারা চায় আমাদের রক্তে-অর্জিত স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও সুশাসনকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর সবুজবাগে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার মিলনায়তনে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন। এই সাধারণ সভার উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ।

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমি উন্নয়নের সূচকের কথা বলছি না। মেট্রোরেল কিংবা পদ্মাসেতু শুধু নয়, আমরা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল শুধু নয়, কর্ণফুলী ট্যানেল শুধু নয়, আজকে জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা হয়েছে। দেশে সুশাসন নিশ্চিত হয় নাই, তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাষ্ট্র একটি সংকল্প গ্রহণ করেছে। অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠিত হয় নাই কিন্তু রাষ্ট্রীয় আচার থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে পরিহার করার একটি সংকল্প গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বাঙালি সংস্কৃতিকে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্নের মধ্যে রাখার কথা ছিল না। আমরা সে জায়গাটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি নাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি মমত্ববোধ সৃস্টির জন্য নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিবাচক মাত্রা দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ আমরা দেখছি বাংলাদেশ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নানামুখী ষড়যন্ত্র।

স্বাধীনতার ৫২ বছরে স্বাধীনতা দিবসের দিনে মার্কিন পাররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন আজ চোখে পড়ার মতো। তাদের সক্ষমতা গত পঞ্চাশ বছরে এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক নেতায় পরিণত হয়েছে।’ এটাও আমাদের মনে আছে তাদের আরেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার স্বাধীনতাণ্ডপরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বলেছিলেন, ‘এই রাষ্ট্র অচিরেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এই রাষ্ট্র হচ্ছে একটি তলাবিহিনী ঝুরি।’ এই পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে, প্রগতি, উন্নয়ন, সুশাসনে এগিয়ে যাওয়ার যে স্বীকৃতি যা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের কোনো-কোনো মানুষ, কোনো-কোনো অপশক্তি, কোনো সুনির্দিষ্ট একটি গ্রুপ তারা উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলতে কোথায় যেন একটু কুণ্ঠাবোধ করেন। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা দিবসের দিনে বাঙালির একটি সংবেদনশীল, একটি আবেগঘন দিনে, দেশপ্রেমের চরম প্রকাশের দিনে দেশের প্রধান সারির জাতীয় দৈনিক হিসেবে দাবি করে এমন একটি কাগজে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, একটি বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য একটি কাল্পনিক দিনমুজুরের মুখ দিয়ে যা বলার চেষ্টা করা হয়েছে, এতে শুধু ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গেই কটাক্ক করে নাই তারা বাংলাদেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সেইসব নাগরিকদের অসম্মান করেছেন। আজ এই কথাগুলো আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আরো বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়-আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছিলাম। কিন্তু বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারিনি। জাতি বিনির্মাণের যে প্রসেস শুরু করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারের হত্যার পর সেই জাতি বিনির্মাণ ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র চলেছে। মনে রাখতে হবে আজ দীর্ঘ ৫২ বছরের বাংলাদেশে প্রায় তিনটি দশক পরিচালিত হয়েছে পাকিস্তানি কায়দায়, পাকিস্তানি দর্শনের ওপর ভিত্তি করে। ফলে সম্প্রীতির বিপরীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জাতি বিভক্তি, হানাহানি ও ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতিরাষ্ট্রের যে মূল ভিত্তি যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সব ধর্মীয় বিশ্বাসকে অক্ষুণ্ন রেখে এক জাতি এক প্রাণ করার যে সংগ্রাম, প্রত্যয় আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় মদদে সেই সংগ্রামকে বিনষ্ট করা হয়েছে। তাই বাঙালি সংস্কৃতি, বাঙালি জাতীয়তাবোধ সেভাবে বিকশিত হতে পারেনি। আজ একটি বৌদ্ধমন্দিরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বৌদ্ধসাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সভায় এই প্রত্যয় ব্যক্ত করি-আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মনিষিরা যারা রাষ্ট্রের জন্মভূমির জন্য আত্ম্যাহতি দিয়েছেন তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করি।’ বলেন তিনি।

উদ্বোধকের বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট রচনা এবং থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এগিয়ে চলা রাজনীতি ও সংস্কৃতিক তুলনামূলক বিচারে বিস্তর আলোচনা করেছেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি প্রৌকৌশলী দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ-এর মহাসচিব প্রফেসর বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ঢাকা অঞ্চলের সভাপতি বাবু দিপাল চন্দ্র বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চিন্ময় বড়ুয়া রিন্টু, মহাসচিব প্রকৌশলী সীমান্ত বড়ুয়া, আধিবাসী ফোরামের সদস্য মেহথিন প্রমিল রাখাইন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।