ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন
অভিযুক্তদের কারণ দর্শানো জবাবের সময় বৃদ্ধি
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইবি প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত তিনজনের কারণ দর্শানোর জবাব দেয়ার সময় বৃদ্ধির আবেদনে ১৪ দিন চুপ থাকার পর জবাবের সময় বৃদ্ধি করল ইবি প্রশাসন। একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি তাদের দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় ইবি প্রশাসন। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মিকে পৃথক তিনটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়েছে, ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না এই মর্মে জবাব দেয়ার সময়সীমা ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এরপর সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে চিঠিতে বলা হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গত ৪ মার্চ ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৫ মার্চের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দিতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান জবাব দেন।
অপরদিকে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার উর্মি জবাব না দিয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করে। একইসঙ্গে তাঁরা আবেদনে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি চান।
আবেদনের পর তিন অভিযুক্তর আবেদন সংক্রান্ত ফাইল রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ফাইল চলে যায় একাডেমি শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানের কাছে। তিনি দেখে ফাইলটি পাঠিয়ে দেন রেজিস্ট্রার দপ্তরে। রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে মতামতের জন্য ফাইল গত ১৪ মার্চ আইন প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হয়।
এদিকে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা মোবাইলের হদিস এখনো মেলেনি। ঘটনার পর পর মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইবি থানার ওসি বরাবর লিখিত চিঠি দেয়। তবে ফোনটি এখনো পাওয়া যায়নি বলে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূর যায়েদ বিপ্লব নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনার কপি আমাদের হাতে আসার পর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গত ৭ মার্চ মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইবি থানার ওসি বরাবর লিখিত চিঠি প্রদান করেন।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূর যায়েদ বিপ্লব জানান, এখনো উদ্ধার হয়নি অভিযুক্ত হালিমা খাতুন উর্মীর মোবাইলে নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ এবং ধারণকৃত সেই মোবাইল মুঠোফোন। তবে তাদের উদ্ধার কার্যক্রম এখনও চলমান বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সেদিন তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটি তদন্ত করছে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা।