দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে ও প্রতারণা করে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এই সরকারকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা পরাজিত হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে একই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সতর্ক হোন, সজাগ হোন, যারা আজকে ক্ষমতাকে বেআইনিভাবে জোর করে ধরে রাখার জন্য সমস্ত ভিন্ন মতকে দমন করছে, হত্যা করছে, গুম করছে, নির্যাতন করছে, কারাগারে নিচ্ছে তাদের হাত থেকে আপনারাও পার পাবেন না। তাই আজকে সবার দায়িত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মিটিং হয়েছে, সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন- নির্বাচনের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে আগাম নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অর্থাৎ তারা ভিন্ন কৌশল নিতে চায়। আগেভাগে নির্বাচন করে গোটা জাতিকে বোকা বানিয়ে আগের মতো ক্ষমতায় যেতে চায়। এবার জনগণ আপনাদের কোনো কৌশলকেই সফল হতে দেবে না। আপনাদের কোনো ফাঁদে জনগণ পা দেবে না এবার তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আপনাদের সমস্ত চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেবে।
ফখরুল বলেন, সব সময় বলে এসেছি এ সরকার গণতন্ত্র মানে না। এ সরকার মানুষের মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেয় না; তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। তাদের অধীনে দুটো নির্বাচন করে বন্দুকের নলের মুখে জোর করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এ দেশের মানুষ কখনোই অন্যায়কে মেনে নেয়নি। সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন, তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদি কেউ সমালোচনা করেন তাহলে তাদের গায়ে লাগে। কারণ তারা গণতান্ত্রিক নন।
তিনি বলেন, দেশের যে সংকট সেটা এই সরকার নিরসন করতে পারবে না। তাই জনগণ এই সরকারকে চায় না। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। সঞ্চালনায় ছিলেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবী, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
১২ দলীয় জোটের অবস্থান : যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে ফুটপাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ১২ দলীয় জোট। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ এলডিপির তমিজউদ্দিন টিটুর পরিচালনায় এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপি চেয়ারম্যান ক্বারি আবু তাহের, বাংলাদেশ এলডিপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল গণি, মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা মহিউদ্দীন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ।
গণ সংহতি আন্দোলন : দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, বাচ্চু ভুঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, পপি রানী সরকারসহ গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
লেবার পার্টি : দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করে লেবার পার্টি ঢাকা মহানগর। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। লেবার পার্টি ঢাকা মহানগর সভাপতি এসএম ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমাউন কবিরের পরিচালনায় কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ সাহা, মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জহুরা খাতুন জুঁই, যুগ্মণ্ডমহাসচিব আবদুর রহমান খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক রাছেল সিকদার লিটন প্রমুখ।
পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট : ১০ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ সাইদুর রহমান। এতে আরো বক্তব্য রাখেন জোটের সহকারী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মাঈনুদ্দীন মজুমদার, জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সভাপতি শাহজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ ওমর ফারুক পীর সাহেব, সংবিধান সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবজাল হোসাইন মৃধা, জাতীয়তাবাদী আইন শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু হানিফ, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিলের সভাপতি শেখ আলীমুল্লাহ আলীম সাধারণ সম্পাদক মো. তোফায়েল আহাম্মেদ মজুমদার, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ ৭১-এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার রহমান সিকদার প্রমুখ। এছাড়া গণফোরাম মতিঝিলে এবং এলডিবি কারওয়ানবাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বলে জানা গেছে।