ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত শ্রমিক
জমে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লি : তৈরি হচ্ছে বাহারি শাড়ি
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এসএম তফিজ উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ
ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিতে খট খট শব্দ জমে উঠেছে। সেইসঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁত শ্রমিকরা। দিন-রাত তাঁতের মাকুর শব্দে মুখরিত তাঁত এলাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁত কারখনায় তৈরি হচ্ছে বেনারশি, সিল্ক, রেশমি, কটন, জামদানি ও কাতান শাড়ি। এতে আধুনিক ও শৈল্পিক কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাহারি নকশা। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সাইজের গামছা ও লুঙ্গি। বিশেষ করে জেলার তাঁতসমৃদ্ধ বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁতপল্লিতে বাহারি নকশার শাড়ি তৈরি জমে উঠেছে। এছাড়া বৈশাখের আবহে শাড়িতে ঢাক-ঢোল ও ইলিশসহ বিভিন্ন রকমের দৃষ্টিকাড়া ছবি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। তবে স্থানীয় তাঁত মালিকরা বলছেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন কাপড়ের বাজার তেমন জমে ওঠেনি। এমনকি উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারজাত করতেও হিমশিম খাচ্ছি। রং ও সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে জেলার ঐতিহ্যবাহী এই তাঁতশিল্প ঘুরে দাঁড়াবে। এদিকে এ জেলায় তাঁতের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পুজা-পার্বণে কাপড়ের চাহিদা বাড়ে। এ কারণে তাঁতপল্লিতে কাজের চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও তাঁতপল্লিগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। এরইমধ্যে ফরিয়া ব্যবসায়ীদের আনোগোনাও বেড়েছে। এনায়েতপুরের অনেক শাড়ি তৈরির ব্যবসায়ী জানান, শাড়ি তৈরির জন্য নরসিংদীর বাবুরহাট থেকে গজ হিসেবে সাদা কাপড় কিনে আনা হয়। পরে ওই কাপড়ে প্রিন্টিংয়ের কাজ করে বাজারে তোলা হয়। তাঁত শ্রমিকরা বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বাড়তি আয় করার জন্য দিন-রাত কাজ করছি। বৈশাখের শাড়ি ও তাঁত ব্যবসায়ীরা বলেন, মার্চ মাসের শুরু থেকে পহেলা বৈশাখের আগের রাত পর্যন্ত চলে প্রিন্টিংয়ের কাজ। ঢাকার গাউছিয়া, ইসলামপুর, টাঙ্গাইলের করটিয়া, পঞ্চগড়ের আটোয়ারি, পাবনার আতাইকুলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কারখানা থেকে শাড়ি নিয়ে যান। বর্তমানে বাজারে বৈশাখি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শ্রমিকদের বেতন, রং ও অন্যান্য খরচ শেষে শাড়িপ্রতি বেশ লাভ থাকে। তাঁত মালিকরা বলছেন, বর্তমানে করোনা মহামারি না থাকায় আবারো তাঁতের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। তবে দীর্ঘদিন লোকসানের মুখে থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন অধিকাংশ তাঁত মালিক। পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষ্যে নতুন করে কাজ শুরু করলেও রং সুতাসহ সব উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আর এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক। সরকার কৃষি উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিলেও বস্ত্র উৎপাদন শিল্পে ভর্তুকির এখনো কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।