সুসংবাদ প্রতিদিন

বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  একেএম রেজাউল করিম, রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি

নরসিংদীর রায়পুরায় মৌসুমি ফল বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দের কান্দির বিস্তীর্ণ চর জুড়ে যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই বাহারি মৌসুমি ফল বাঙ্গির সমারোহ।

বাঙ্গি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তীব্র গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে তরমুজের পরেই বাঙ্গির স্থান ধরা যায়। তীব্র গরম আর পবিত্র মাহে রমজান মাসে সারা দিন রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তির ছাপ মুছতে বেশিরভাগই ইফতারে বাঙ্গির চাহিদা থাকে।

নরসিংদীর রায়পুরার বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমি ফল বাঙ্গি। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি বিস্তীর্ণ চর জুড়ে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই কেবল দিগন্ত জোড়া মাঠে চৈত্রের বাহারী মৌসুমী ফল বাঙ্গির সমারোহ দেখা যায়। সাড়ে তিন মাস নিবিড় পরিচর্যার পর মাঠে মাঠে এখন চলছে কৃষাণ কৃষাণীর বাঙ্গি তোলার হিড়িক। তাদের চোখে মুখে আনন্দ। বাঙ্গির বাম্পার ফলন হওয়ায় ভালো দামে বিক্রি করতে পারায় এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। উৎপাদিত ফসল নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় কৃষকরা। কম পুঁজিতে ভালো মুনাফা ও প্রচুর ফলন পাওয়ায় এই এলাকার কৃষকরা বাঙ্গি চাষের প্রতি অধিক ঝুঁকছেন। রমজান মাসে প্রতি পিস বাঙ্গি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

সরেজমিন গেলে দেখা যায়, বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি এলাকার বেশিরভাগ মানুষই মৌসুমি এই কৃষিপণ্য বাঙ্গির চাষ করে থাকেন। প্রতিদিনই নরসিংদী জেলাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে জমি থেকেই বাঙ্গি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেক পাইকারি ব্যবসায়ীরাই তাদের সাধ্যমতো বাঙ্গি ক্রয় করে এখান থেকে।

স্থানীয় কৃষক বলছেন, এটি অন্যান্য সবজি বা ফসলের চেয়ে চাষের তুলনায় আয় বেশি তাই অধিকাংশ চাষিই বাঙ্গি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার এখনো পর্যন্ত বাঙ্গির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি দরে বাঙ্গিগুলো প্রতি ১০০ পিস ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা প্রতি পিস পাইকারি মূল্যে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পড়ে। রায়পুরা উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে রায়পুরা উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৫০০ টন কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ৫৩০ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া জানান, তিনি টানা ৪ বছর যাবত বাঙ্গির চাষ করে আসছেন। এবার তিনি ৩৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এবার বাঙ্গি চাষে তার ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারমূল্যে তার জমির সব ফসল বিক্রি করতে পারলে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মতো লাভবান হতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি। কৃষক ইসমাইল জানান, তিনি ৮০ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি উৎপাদন করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই জমি থেকে বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন তিন লাখ টাকা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে রায়পুরার চরাঞ্চলে ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। এতে ৫৩০ মেট্রিক টন বাঙ্গি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছর ৩০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি আাবাদ হয়েছিল। এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে এবং আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। কৃষি অফিস রায়পুরার বাঙ্গি চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও বাঙ্গি চাষে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।