ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের ২ বছর

আটকে আছে নাশকতার ১৬ মামলা ধর্ষণ মামলার বিচার চলছে

আটকে আছে নাশকতার ১৬ মামলা ধর্ষণ মামলার বিচার চলছে

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আলোচিত মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডের দুই বছর পার হচ্ছে আজ। সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে তাণ্ডবের পর নারায়ণগঞ্জে ১৬টি নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে সোনারগাঁ থানায় ৮টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৭টি ও রূপগঞ্জে ১টিসহ মোট ১৬টি মামলা দায়ের হয়েছিল। এরপরে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ চলছে। তবে নাশকতার ১৬টি মামলার তদন্তকাজ এখনো শেষ করতে পারেনি পুলিশ। এসব মামলায় এখনো চার্জশিট দাখিল না করায় শুরু হয়নি বিচার কাজ।

জানা গেছে, মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে বেপরোয়া তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ওইদিন হেফাজতের হরতালের নারায়ণগঞ্জ, কাঁচপুর, সাইনবোর্ড ও রূপগঞ্জে ব্যাপক নাশকতা করে হেফাজত নেতাকর্মীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একাধিক স্পটে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর, সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে।

এরপর ৩ এপ্রিল রিসোর্টকাণ্ডে ও মামুনুল হকের ধর্ষণ কান্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ওই বছরের ৩ এপ্রিল ‘বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নাম্বার কক্ষে মামুনুল হককে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ অবরুদ্ধ করে রাখে উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ স্থানীয় কয়েকজন। সন্ধ্যা ৭টায় মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রয়েল রিসোর্ট ভাঙচুর করে নারীসহ মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ অফিস, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। স্থানীয় এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে নির্যাতনের মুখে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটে।

২৮ মার্চ হরতালে নাশকতা এবং ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রিসোর্টে ধর্ষণ ও নাশকতার ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় ৮টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৭টি ও রূপগঞ্জে ১টিসহ মোট ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলায় বাদী হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পরিবহণ মালিকরা। ১৬ মামলায় বেশ কয়েকটিতে মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, হেফাজতের আরও কয়েকশ’ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অন্তত ১৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এই ৬টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় প্রধান আসামি মামুনুল হক।

মাওলানা মামুনুল হককে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ ও সহিংসতার ৩টি এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা নাশকতার তিনটিসহ ৬টি মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগে মামুনুল হকই একমাত্র আসামি। ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেয়া হয়। ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। ১৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় মামুনুলের বিরুদ্ধে রয়েল রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ, রিসিপশন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম অনিক ও আনসার গার্ড রতন বড়াল সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, রিসোর্টের রিসিপশন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ও আনসার গার্ড ইসমাঈল আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এছাড়াও নাজমুল হাসান শান্ত, মো. শফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি ও রতন মিয়া সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের আরো তিন কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। সাক্ষ্য দেয়া পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন, সোনারগাঁ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কর্ন কুমার, শেখ ফরিদ ও মতিউর রহমান।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিব উদ্দিন জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় মামলার বাদী, পুলিশ কর্মকর্তা, রিসোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাসহ ২১ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

এদিকে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ শুরু হলেও নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত ১৬টি মামলার বিচার কাজ এখনো শুরু হয়নি। ওইসব মামলার কোনোটিরই এখনো চার্জশিট আদালতে দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত ৭টি মামলার মধ্যে ৩টি থানা পুলিশ তদন্ত করছে। বাকী ৪টি মামলা সিআইডি, পিবিআই ও ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ চললেও হরতাল ও রিসোর্টকান্ডে নাশকতার মামলাগুলোর কোনটিরই এখনো পর্যন্ত আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়নি। যে কারণে ওইসব মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি।

সোনারগাঁ থানার ওসি মাহাবুব আলম জানান, রিসোর্ট কাণ্ডে নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত