ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

গোপালগঞ্জে ফসল রক্ষায় আলোর ফাঁদ

গোপালগঞ্জে ফসল রক্ষায় আলোর ফাঁদ

সন্ধ্যায় ক্ষেতের পাশে আলো জালানো হয়। আলোর নিচে রাখা হয় পানির পাত্র। পাত্রের পানিতে ডিটারজেন্ট মেশানো থাকে। অন্ধকারে ক্ষেতের পোকা এ আলোর দিকে উঠে আসে। আলোর চারিপাশে ঘোরাফেরা করে। একপর্যায়ে পোকাগুলো পাত্রের পানিতে পড়ে মারা যায়। মরে যাওয়া পোকা থেকে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়। তারপর পোকা দমনে কৃষককে পরামর্শ দেয়া হয়। কৃষক এ পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করে ফসল রক্ষা করেন। এতে নিরাপদ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কৃষক লাভবান হন।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বোরো ধান রক্ষায় সব ব্লকেই আলোর ফাঁদ বসিয়ে ক্ষতিকর পোকামাকড় চিহ্নিত করণ কার্যক্রম শুরু করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কদমবাড়ি ব্লকের খেজুরবাড়ি গ্রামে আলোর ফাঁদ বসিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ সময় কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দোবাশীষ দাস, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কৃত্তিবাস পান্ডে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুধাংশু হালদার, রমেন্দ্র নাথ হালদার, বিকাশ সরকার, পার্থপ্রতিম বৈদ্য, সুমন মৈত্র সহ ওই গ্রামের কৃষক ও কৃষাণিরা উপস্থিত ছিলেন। কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কৃত্তিবাস পান্ডে বলেন, আলোর ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকার উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়। তারপর এসব পোকা দমেনে কৃষকে পরামর্শ দেয়া হয়। কৃষক আমাদের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করেন। এভাবে তারা ক্ষেতের ফসল রক্ষা করে অধিক ফসল ঘরে তোলেন। আমরা এ কার্যক্রম শুরু করেছি। উপজেলার প্রতিটি ব্লকেই এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, ক্ষেতে ধান গাছের বয়স ৬০ দিন হওয়ার পর পোকার আক্রমণ হতে পারে। তাই আমরা আলোর ফাঁদ বসিয়ে ক্ষেতের ক্ষতিকর মাজড়া, পাতা মোড়ানো পোকা, গান্ধিপোকা, জিএলএইচ, বিপিএইচ পোকার উপস্থিতির পরিমান চিহ্নিত করি। এগুলো দমনে কীট নাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেই। কৃষক আমাদের পরামর্শে নিরাপদ বালাই নাশক প্রয়োগ করে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করেন। এতে কৃষক ধানের অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হন। কীটনাশকের প্রতিক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কৃষক ক্ষেত থেকে ফসল কর্তন করেন। তাই তারা ক্ষেত থেকে নিরাপদ ফসল ঘরে তোলেন। খেজুরবাড়ি গ্রামের কৃষক মৃনাল কান্তি বলেন, আলোর ফাঁদ বসিয়ে প্রতি বছর আমাদের ফসল রক্ষায় কৃষি বিভাগ পরামর্শ দেয়। এবারও আলোর ফাঁদ বসানো হয়েছে। এখান থেকে পোকা চিহ্নিত করে আমাদের পারামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমারা পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এভাবে পোকার হাত থেকে আমরা ফসল রক্ষা করি। অধিক ফলন পাই। এ কারণে ধান চাষ করে আমরা লাভবান। এ জন্য কৃষি বিভাগকে আমি ধন্যবাদ জানাই। একই গ্রামের কৃষাণী পারুল বিশ্বাস বলেন, আগে পোকায় ধান খেয়ে শেষ করে দিত। ফলন তেমন ভালো হতো না। তাই কৃষি বিভাগ পোকার হাত থেকে আমাদের ফসল রক্ষায় আলোর ফাঁদের ব্যবস্থা করেছে। তাদের পরামর্শে এখন ফসল রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতি বছর অনেক ফসল ঘরে তুলতে পারছি। ধান চাষ করে আমরা ভালো আছি। কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস বলেন, এ বছর কোটালীপাড়ায় ২৬ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কৃষক যাতে সহজে ঘরে ধান তুলতে পারে, সেই জন্য আমরা মাঠে বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি। এখন প্রতিটি ব্লককে আলোর ফাঁদ বসিয়ে ক্ষতিকর পোকা চিহ্নত করে দমনের পরামর্শ দিচ্ছি। এরপর ধানকাটা ও মাড়াই শেষে ঘরে ধান তুলে দিয়ে আমরা পরামর্শ ও সহযোগিতা করব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত