পদ্মা সেতুতে উঠল স্বপ্নের রেল

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

পদ্মা সেতুতে উঠল স্বপ্নের রেল। যোগাযোগের নবদিগন্ত পেতে চলছে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। গতকাল পদ্মা সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক সাত বগির বিশেষ রেল চলে। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ফিতা কেটে বিশেষ রেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এরপর ১টা ১৫ মিনিটে বিশেষ রেলটি চলতে শুরু করে। ৪২ কিমি. পথ পাড়ি দিয়ে প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে যায়। রেল চলাচলের মধ্য দিয়ে পূরণ হলো দুই পাড়ের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন। পদ্মা সেতুর নিচতলায় ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রেলপথ।

ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত টেস্ট রান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনসহ জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়াও বিশেষ রেলে যাত্রী হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক-ছাত্র, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

রেলটি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ার ও পদ্মা সেতু পেরিয়ে মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারের কাছে আসতেই আতশবাজি ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আজ পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। সেপ্টেম্বরে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা রুটে যাত্রী চলাচল শুরু করবে। প্রধানমন্ত্রী দ্রুতই এ পথের উদ্বোধন করবেন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে প্রথম ট্রেন চালিয়েছেন লোকো মাস্টার রবিউল ইসলাম। ইতিহাসের অংশ হয়ে গর্বিত তিনি। বলেন, আমি যখন প্রথম জানতে পারলাম যে প্রথম ট্রেন চালাব; তখন থেকেই উচ্ছ্বাস কাজ করছে। ইতিহাসের অংশ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।

রেলে চড়ে পদ্মা পার হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম মাতুব্বর। ৮০ ঊর্ধ্ব প্রবীণ তিনি। থাকেন ফরিদপুরের পুখুরিয়ায়। সেখান থেকে ভাঙ্গা রেলস্টেশনে এসেছেন। এক ছেলে আর এক মেয়ে তার। ছেলে চাকরি করে রাজবাড়ী আর মেয়ের চাকরি ঢাকায়। জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম মাতুব্বর আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ভোরে ভাঙ্গার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আগে-আগে চলে আসছি, রেলে চড়ে পদ্মা সেতু পার হবো। খুবই ভালো লাগছে। কল্পনাও করি নাই পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে রেল চলবে। বয়স হয়ে গেছে আর কতদিন বাঁচব তার ঠিক নেই। রেলে করে পদ্মা নদী পার হওয়ার জন্য ভাঙ্গা রেলস্টেশনে এসেছি। বেঁচে থাকলে আমার বাড়ির সামনে থেকে রেলে চড়ব। আমার বাড়ির কাছেই পুখুরিয়া রেলস্টেশন। তাই ইতিহাসের সাক্ষী হতে এলাম।

তিনি আরো বলেন, শেখ সাহেবের নেতৃত্বে আমরা এ দেশ স্বাধীন করছি। তার মেয়ে শেখ হাসিনা আজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি পদ্মা নদীর ওপর সেতু করেছেন, রেললাইন করেছেন। বিদেশ থেকে ট্রেন আনছেন দেশের মানুষের জন্য। এই ট্রেনে করে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ রাজধানীতে যাবে। রংপুর-দিনাজপুরসহ উত্তর বঙ্গে যেতে পারবে। যানজট ছাড়াই দেড় ঘণ্টায় ফরিদপুর থেকে মানুষ ঢাকায় যেতে পারবে। শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি। তার জয় হোক। বারবার নির্বাচনে যেন তার জয় হয়। আশা করি শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হবেন।

ভাঙ্গার বাসিন্দা তৌহিদুর রহমান বুলবুলও চড়েছেন রেলে। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, একটা ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। যে ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য আমরা যুগ-যুগ ধরে অপেক্ষা করেছি। আমরা স্বপ্নেও কখনো ভাবি নাই, প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপরে সেতু হবে। পদ্মা নদীর ওপরে সেতু এবং রেলপথ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। পদ্মা সেতু ও রেলপথের কল্যাণে আজকে দক্ষিণ বঙ্গে উন্নয়নের বিপ্লবের ধারা সূচিত হয়েছে। আজকে এই রেল যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে আমার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইলাম।

ভাঙ্গার তুজারপুর গ্রাম থেকে এসেছেন মিরাজ আলী মোল্লা। তিনি বলেন, পদ্মা নদীর ওপরে আজকে স্বপ্নের রেল চলবে। এজন্য আমার খুবই আনন্দ লাগছে। স্বপ্ন আজকে বাস্তবে রূপ লাভ করেছে।

স্বামী আর সন্তানকে নিয়ে রেলে চড়েছেন অঞ্জনা রানী। তিনি উত্তর বঙ্গের রাজশাহীর মেয়ে। স্বামীর চাকরির সুবাদে এসেছেন ফরিদপুরের ভাঙায়। জানতে চাইলে অঞ্জনা রানী বলেন, আমার পরিবারের তিনজনই রেলে আছি। প্রথম এই রেল পদ্মা নদী পার হবে। আমি খুবই এক্সাইটেড। আমার খুবই ভালো লাগছে। প্রথমবারের যাত্রী হতে পরে আনন্দ লাগছে।