প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় জেলায় এবার সজনের বাম্পার ফলন হয়েছে। জয়পুরহাটের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এতে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জয়পুরহাট জেলায় এবার ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সজনে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও চাষ হয়েছে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এতে সজনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। জেলার পাঁচ উপজেলাতেই বিশেষ করে সদর উপজেলার মোহাম্মাদাবাদ, বম্বু, ভাদসা, দোগাছী, জামালপুর, দোগাছী, চকবরকত, ধলাহার ও পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর, মোহাম্মদপুর, আওলাই, ধরঞ্জি, বাগজানা, মোহাম্মদপুর ও কুসুম্বা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বাড়ির পাশের অনাবাদি ও পতিত জমিতে সাধারণ চৈতালি সজনের পাশাপাশি বারোমাসি সজনেরও চাষ হয়েছে। এছাড়াও কালাই উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অকৃষি বা পতিত জমিতে হাইব্রিড, বারোমাসি ও দেশি জাতের সজনের চাষ হচ্ছে। বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুরপাড়ে, ছাদে ও হাসপাতাল, স্কুল, কলেজের মাঠে এবং রাস্তার দুই পাশে অকৃষি বা পতিত জমিতে পুষ্টিগুণে ভরপুর ও আশঁজাতীয় সজনের সারি সারি গাছগুলো এখন সজনের ভারে ন্যুয়ে পড়েছে। জেলায় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সজনে চাষ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এখানকার সজনে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে বলে জানান স্থানীয় কৃষক নাজমুল হোসেন। নতুন হাটের পাইকারি ক্রেতা আইয়ুব আলী জানান, জয়পুরহাটের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ নাটোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ভোলা জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এতে পারিবারিক চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি সজনে বিক্রি করে অনেকেই অর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। বাজারে ওঠা প্রথমদিকে আগাম জাতের ও বারোমাসি সজনে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এবার সজনের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরাও খুশি। সজনে চাষ এরইমধ্যে অর্থকরি ফসল হিসেবে সবার কাছে বিবেচিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় এবার সজনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। সদর উপজেলার ধলাহার এলাকার সজিনে চাষি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ির সমনে রাস্তার দুইধারে ১৫টি সজনের গাছ লাগানো হয়েছিল। গত বছর ওইসব সজনের গাছ থেকে প্রায় ৮ মণ সজনে পেলেও এবার ৯ মণ সজনে বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। এবার সজনের বাম্পার ফলন পেয়ে খুশি বলে জানান তিনি। জয়পুরহাটের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মানিক বলেন, সজনে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ডাঁটা জাতীয় সবজি। সজনের মধ্যে ভিটামিন-এ ও সি আছে। এটি মানব দেহে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সজনে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসজনিত রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। তাছাড়া সজনের পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এটিও প্রচুর পুষ্টি গুণসমৃদ্ধ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন বলেন, সজনে একটি পরিবেশবান্ধব ও অর্থকরি আশঁজাতীয় সবজি। এবার জয়পুরহাটে সজনের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, এটি বসতবাড়ির আশপাশের অনাবাদি ও পতিত জমিতেও চাষ করা যায়। সজিনে চাষে তেমন খরচ লাগে না। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। সজনে গাছের তেমন কোনো রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। একটু পরিচর্যা করলেই অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।