ঢাকা ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সতর্কবাণী

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে সম্ভবত তৃতীয় পরমাণু বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন দেশকে ধ্বংস করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মঙ্গলবার সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষ প্রদানের মামলায় আদালতে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রায় এক ঘন্টা পরই ট্রাম্প মুক্তি পেয়ে আদালতকক্ষ ত্যাগ করেন।

ট্রাম্প আদালতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি। এমনকি তাকে সে সময় বেশ বিষণ্ন এবং শান্ত থাকতে দেখা গেছে। আদালতে হাজিরা দেয়া, পরবর্তীতে গ্রেপ্তার ও মুক্তি পাওয়ার পরই প্রথমবারের মতো জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। সেখানেই তিনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কার কথা জানান। সাবেক পর্নো তারকার মামলায় আসামি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ইতিহাস গড়েছেন ট্রাম্প। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি মামলার আসামি হলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হলেও সব অভিযোগেই ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান মার্কিন সরকারের সময়ে বিভিন্ন দেশ প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে যা তার প্রশাসনের সময় হয়নি। নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায় নিজের মার-এ-লাগো রিসোর্ট থেকে এসব কথা বলেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান দলের এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

ট্রাম্প বলেন, চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া একত্রে একটি ‘ভয়ংকর এবং ধ্বংসাত্মক জোট’ হিসেবে গঠিত হয়েছে যা তিনি নেতৃত্বে থাকার সময় কখনোই সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আমি যদি আপনাদের প্রেসিডেন্ট থাকতাম তবে এটা কখনোই ঘটত না। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করত না। অনেকগুলো জীবন রক্ষা পেত। সুন্দর সুন্দর শহরগুলো এখন দাঁড়িয়ে থাকত। এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পাঁচজন প্রেসিডেন্টের কথা বলেন এবং তাদের কর্মকাণ্ড একত্র করেন তারপরেও বাইডেন প্রশাসনের মতো এতটা ধ্বংসাত্মক আর কেউ হয়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদালতে আত্মসমর্পণ শেষে ফ্লোরিডায় ফিরে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এ ফৌজদারি অভিযোগ দেশকে অপমান করার শামিল। আদালতে শুনানিকালে ৭৬ বছর বয়সি ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস-এর সাথে সম্পর্কের কথা ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেয়ার মামলায় অভিযুক্ত হন। সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস দাবি করেন ২০০৬ সালে তার সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর ১০ বছর পর ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন তখন স্টর্মি ড্যানিয়েলস মিডিয়ার কাছে সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ খুলতে চান। মুখ বন্ধ করাতে আইনজীবীর মাধ্যমে ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন ট্রাম্প। এভাবে অর্থ দেয়া আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ নয়। কিন্তু বিপত্তি বাধার কারণ, ট্রাম্প ওই ১ লাখ ৩০ হাজার ডলারকে আইনি খরচ হিসেবে দেখিয়েছেন; ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক হিসাব জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ঘটায় নির্বাচনি আইন ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব ছিল নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের ওপর। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য তিনি গ্রান্ড জুরি গঠন করেন। গত ৩০ মার্চ এ জুরি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত জানায়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবসা সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য দেয়াসহ মোট ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে ট্রাম্পকে সশরীরে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতে যাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর আদালত ত্যাগ করেন তিনি। সূত্র : বিবিসির

ক্ষমতায় থাকাকালীন দু’বার অভিশংসিত হওয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে, এই মামলাকে নিজের শক্তিশালী সমর্থন বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। ইতোমধ্যে এই মামলায় লড়াইয়ের জন্য সমর্থকদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছেন আগামী বছর হোয়াইট হাউসে ফেরার ঘোষণা দেওয়া ট্রাম্প। তবে বাইডেন প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমাকে কারাগারে পাঠানোর বার্তা দেয়া হয়েছে অতি বামপন্থি বিচারকদের কাছ থেকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত