গ্রামবাংলার ঐতিহ্য

রহিমপুর ঈদগাহ মাঠে কালের সাক্ষী বটবৃক্ষ

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসএম তফিজ উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ

গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ‘বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে.., মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে..’ এ লোকসংগীত আজও মনে করে দেয় গ্রামীণ ঐতিহ্য বটবৃক্ষের কথা। সময়ের বিবর্তনে বটগাছের ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে গেছে। তবে এখনো সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ইছামতি নদীর অদূরে রহিমপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী পুরোনো বটগাছ। এ বটগাছের পাশেই ওই গ্রামের পূর্বপুরুষদের কবর রয়েছে। এক সময় বাড়ির সামনে, জমির কাছে ও বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত অনেক বটগাছ। বটবৃক্ষের নিচে গ্রামগঞ্জের মেলাও বসত। গ্রামবাংলায় অনেক ক্ষেত্রে ঠিকানা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন স্থানকে ‘বটতলা’ বলা হতো। এমনকি পথ ঘটে, নদীর পাড়ে, জনবিরল স্থানে ডাল-পাতায় ভরা বটগাছ ছিল পথিকের বিশ্রামের জায়গা। বিশেষ করে কৃষকরা মাঠের কাজ শেষে বিশ্রাম নিতো বটগাছের নিচে। বটগাছের এ ছায়া মানুষ, পাখি, কীটপতঙ্গের অকৃত্রিম বন্ধু। এ বন্ধু বটগাছ এখন তেমন গ্রামঞ্চলে চোখে পড়ে না। পুরোনো অনেক বটগাছ চোখে পড়লেও নানা অজুহাতে কেটে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও এ বটগাছ কাটা বন্ধ হয় না। বিশিষ্টজনরা বলছেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে ছুটতে গিয়ে মানুষ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ভুলে যাচ্ছে। আর এ বটের ছায়া তেমন মিলছে না এ গ্রামঞ্চলে। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, যে কোনো এলাকায় একটি বটগাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে ৩ শতাধিক প্রজাতির আবাস নষ্ট হয়। তুলনামূলকভাবে এ গাছে শিতল পাতা বেশি। বসন্ত ও শরৎকালে এ গাছে নতুন পাতা গজায় এবং কচি পাতার রং সবুজ ঘেরা চকচকে। এ বটগাছের মঞ্জরির গর্ভে অনেক ছোট এবং গোলাকার ফুল লুকানো থাকে। এক লিঙ্গিক ফুল পরাগায়ণের জন্য পতঙ্গের ওপর নির্ভরশীল। এ শিতল বটগাছের ফল পাকে গ্রীষ্মণ্ডবর্ষা-শীত মৌসুমে। এ বটগাছ ঘিরে গ্রামঞ্চলে প্রবাদও রয়েছে আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা স্কুলে যাই। ফেরার পথে ওই বটগাছের নিচে কিছুক্ষণ সময় কাটাই।

এদিকে ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন, আনন্দঘন পরিবেশে প্রতি বছর ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এ ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। উষ্ণ আবহাওয়ায় এ ছায়াবৃক্ষ অনেক উপকারে আসে বলে তারা উল্লেখ করেন।