খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আ.লীগ
নির্বাচন পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না : ওবায়দুল কাদের
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ৬৫০ স্থানে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকালও মাঠে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ‘পাল্টা’ কর্মসূচি না দিয়ে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কৌশলে রাজপথে থাকে দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপি-জামায়াতের অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিশৃংখলা রোধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সতর্কতার সঙ্গে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
রাজধানীর মিরপুরে দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল আগুনের কথা বলে। এ আগুন সন্ত্রাস এ দেশে তারাই সৃষ্টি করেছে। এখন দেশে আগুন নিয়ে যে নাশকতা করছে তার সঙ্গে বিএনপি জড়িত। বিএনপির অতীত ইতিহাস নাশকতার ইতিহাস। ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজানের দিনে ৩৬৫টি কর্মসূচি দিয়ে বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ ও অবরোধ করে মানুষকে কষ্ট দেয়া বিএনপির রাজনীতি গণবিরোধী রাজনীতি। যারা এ দেশে আগুন সন্ত্রাস করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত সেই বিএনপি যখন আগুনের কথা বলে তখন আমাদের কাছে মনে হয়, ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাইনি।
সরকারের পদত্যাগ করে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসা প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকার যদি পদত্যাগ করে তাহলে সংলাপ করবে কে? এ প্রশ্নের উত্তর মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে জানতে চাই। এ উদ্ভট, আবোল তাবোল কথা বলছে বিএনপি। আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসে না। ভাটার টান এসে গেছে। বিএনপির পদযাত্রা নিরব যাত্রা। মানুষ বলে মরণ যাত্রা। এখন বিএনপির আন্দোলন মাটিতে নেমে গেছে, তার নাম অবস্থান কর্মসূচি। এ আন্দোলন পাবলিক খায় না, এ আন্দোলনে জনগণ নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৫২ দল শুনেছি, এখন পাঁচ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও বিএনপির শরিকদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোথায় ২৭ দফা? রাষ্ট্র নাকি মেরামত করবে? এই রাষ্ট্র মেরামত করেছেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র যারা ধ্বংস করে তারা মেরামত করতে পারে না। কত নালিশ, কূটনীতিকদের পাড়ায় পাড়ায় বিএনপি নেতাদের পদচারণা। জাতিসংঘের কাছে এমনকি নালিশ দিবে! জাতিসংঘের এটা কাজ নয়, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। এর আগে মির্জা ফখরুল জাতিসংঘের দুয়ারে ঘুরেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবকে পায়নি, কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে খালি হাতে ফিরেছে। যাদের কাছে নালিশ করবে তাদের হাতে সালিশ করার ক্ষমতা নেই। লজ্জা শরম থাকলে আন্দোলনের কথা মুখে বলবেন না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য আইন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে শেখ হাসিনার সরকার। নির্বাচন কমিশনের উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনকে ভন্ডুল করা তাদের মতলব। নির্বাচনে না এলে জোর করে আনতে পারব না। কিন্তু নির্বাচনে বাধা দিতে আসলে প্রতিরোধ করা হবে। নির্বাচন পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না, অপরাজনীতির হোতা বিএনপিকে প্রতিহত করব।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে সুবিধাভোগীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণ করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী।
এদিকে কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর জুরাইনে গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে দলটির নেতারা। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে তিনি বলেন, পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, বড় বড় নেতারা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে, তারা এখন বাংলাদেশ হতে চায়। আর বাংলাদেশে বিএনপি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, কিছু বুদ্ধিজীবী ও কিছু মিডিয়া বলে পাকিস্তানই ভালো ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ করে লাভ হয় নাই। এরা দেশের শত্রু, পাকিস্তানের দালাল। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের যে পর্যায়ে এখন আছে, সে পর্যায়ে আসতে পাকিস্তানের আরো ১২ বছর লাগবে। কাজেই, যারা বলে পাকিস্তানই ভালো ছিল, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা পাকিস্তানের পত্রিকা পড়ুন, খোঁজখবর নিন। পাকিস্তানে এখন একটি ডিমের দাম ৩০-৩৫ টাকা, এক ডলার সমান ২৫০ রুপি। পাকিস্তানে কত মানুষ না খেয়ে থাকে তার খোঁজ নিন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। গেন্ডারিয়ার থানার ৪৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাসান আসকারীর সভাপতিত্বে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এসময় দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
যুবলীগের উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ : আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগ গতকাল তুরাগ থানার কামারপাড়া স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা’র খাদ্যসামগ্রী উপহার বিতরণ করেছে। সেখানে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ও সংকটময় দেখাতে একটা গোষ্ঠী মরিয়া। আর ৯ মাস পরে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা সংসদ নির্বাচন। ঐ নির্বাচনে আমার বিশ্বাস আপনারা নিশ্চয় তাদেরকেই ভোট দিবেন, যারা আপনাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। আপনারা নিশ্চয় তাদেরকেই ভোট দিবেন, যাদের দ্বারা গণতন্ত্র সুসংহত হবে, শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সকলের জন্য সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এই অঙ্গীকারসমূহ পূরণে আমাদের সকলেরই একযোগে কাজ করা উচিত, যাতে করে আমরা গড়ে তুলতে পারি আগামীর সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, একটা ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের এক পরিকল্পিত নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে যে, সাধারণ মানুষ যেন সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তৎপর হয়েছেন। আর এ নীলনকশার বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন এক-এগারোর কুশীলবরা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এখন বেশ জোরেশোরে চলছে। কিছু গণমাধ্যম এখন খুবই নগ্নভাবে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ। যার ন্যাক্কারজনক বহিঃপ্রকাশ সম্প্রতি জনগণের সম্মুখে এসেছে প্রথম আলোর হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটাকে শুধু হলুদ সাংবাদিকতা বলা যায় না। এই ধরনের সাংবাদিকতা সমগ্র সাংবাদিক পেশাজীবীদের কলঙ্কিত করেছে। এর মাধ্যমে শিশুর সরলতাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা হয়েছে। একজন সাংবাদিকের সন্তান হিসেবে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আমি প্রথম আলোকে প্রত্যাখ্যান করে এদেশের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি করছি। চক্রান্তকারীরা দেশটাকে ঝুঁকিপূর্ণ, সংকটময় ও রাষ্ট্রকে ব্যর্থ দেখানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে সাতকানিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে দুস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে দলটি। সেখানে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, দেশের অর্জন, দুর্যোগ, দুর্বিপাক সব সময় আওয়ামী লীগই মানুষের পাশে ছিল। এবারও বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে দুস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর লালুর সভাপতিত্বে ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী, একে আজাদ, অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার, জসিম উদ্দিন, শাহজাহান, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আসাদ প্রমুখ।