সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা
সাংঘর্ষিক বিষয় বিলোপের দাবি জাসদ সভাপতির
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংবিধানের চার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বিলোপের দাবি জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিগত বিভ্রান্তির অবসান, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য বিষয়ে সংবিধান পর্যালোচনায় বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ওই কমিটি গঠনের কথা বলেছেন।
গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ প্রস্তাব করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার ১৪৭ বিধির এই সাধারণ প্রস্তাবটি সংসদে তুলেছেন। সংবিধান পর্যালোচনায় সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে হাসানুল হক ইনু বলেন, সংবিধানের চার নীতি পুনর্জীবনের পরে এই সংঘর্ষিক অবস্থা (বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম) আমাদের বিব্রত করছে। সংবিধানের এই সাংঘর্ষিক অবস্থা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে যা যা সাংঘর্ষিক তা বিলোপ করতে হবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করা ও তাদের আত্মপরিচয় আরো স্পষ্ট করতে হবে। এজন্য সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সংবিধান পর্যালোচনার জন্য বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করছি।
বিএনপি-জামাতের কঠোর সমালোচনা করে ইনু বলেন, নষ্ট রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি ও জামায়াত তথাকথিত ২৭ দফা ও ১০ দফা দিয়ে সংবিধান খোলনলচে বদলে দেয়ার হুঙ্কার ছেড়েছে। সংবিধানটাকেই বাতিল করার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিএনপি পঁচাত্তরের পর যেসব অপরাধ করেছে, এখনো তার পক্ষে সাফাই গাইছে। বিএনপি আসলে মুখে বাংলাদেশ অন্তরে পাকিস্তান বলে জপ করছে। বিএনপি সংবিধান খেয়ে ফেলতে চায়। রাজাকারদের রাজনীতির মধ্যে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। তারা সাংবিধানিক ধারা বানচাল করতে চায়। অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কোন মাঝামাঝি রাস্তা নয়; বিএনপিকে রুখেই দিতে হবে, রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সকল সমালোচনার মুখে ঐক্যের ঝা-া হাতে নিয়ে ১৪ দল ও মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালে মাইনাস টু তত্ত্ব বাতিল করে দিয়ে বিপুল ভোটে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে নিয়ে ক্ষমতায় এনে সংবিধান সংশোধনে হাত দেন। ১৫তম সংশোধনী তারই ফসল। আজকে যে সংসদ দেখছেন, সেই সংসদের কার্যক্রম চলছে বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতির ভিত্তিতেই। বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির ফেরত যাত্রায় ১৯৮০ থেকে আজ অবধি শেখ হাসিনা আমাদের কাণ্ডারি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামরিক ও সাম্প্রদায়িকতার জঞ্জাল পরিষ্কার করার কাজ করার পাশাপাশি যুদ্ধপরাধীদের বিচারের কাজ চলছে। জঙ্গি দমনের ওপর বুলডেজার চলছে।
সাবেক মন্ত্রী ইনু প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির পাশাপাশি দলভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি, শ্রেণি-পেশার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও স্থানীয় সরকারদের নিয়ে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করার এবং অনাস্থা বিল ও অর্থবিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা বিল বাদ দিয়ে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এমপিদের আইন তৈরি আরো ক্ষমতা প্রদান, সংসদের স্থায়ী কমিটিতে উন্মুক্ত করা ও সকল স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং সংবিধান ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবি জানান তিনি।