ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এসসিআরএফের জরিপ

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিন মাসে নিহত ৫৭৯

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিন মাসে নিহত ৫৭৯

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সারা দেশে এক হাজার ৩০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৮৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৫ জন। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের (১৬.৪৮) মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকার গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) পর্যবেক্ষণ ও জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জরিপের এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির দিক থেকে মোটরসাইকেলের অবস্থান শীর্ষে। তিন মাসে ৫২৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৭৯ জন, যা মোট দুর্ঘটনা ও নিহতের যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৪৭ ও ৩৯ দশমিক ০১ শতাংশ। দুই চাকার এ ক্ষুদ্র বাহনে গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছেন ৬ জনেরও (৬.৪৩) বেশি মানুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে সর্বাধিক ৪৭৯টি দুর্ঘটনায় ৫৮৪ জন নিহত ও এক হাজার ১০২ জন আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৩৯২টি দুর্ঘটনায় ৪১১ নিহত ও এক হাজার ১০২ জন আহত হয়েছেন। জানুয়ারিতে ৪৩১টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৮৯ জনের। এ তিন মাসে সর্বাধিক ৪২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সড়কে নিহতের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পথচারী। এ সময় ৩৭০ জন পথচারী মারা গেছেন, যা মোট নিহতের ২৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তিন মাসে ২১১ নারী ও ২১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মোট প্রাণহানির মধ্যে নারী ও শিশুর অবস্থান যথাক্রমে ১৪ দশমিক ২১ ও ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ সময় অন্যান্য গাড়িচালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ২০৯ জন, যা মোট প্রাণহানির ১৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে সড়কভিত্তিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তিন মাসে সর্বাধিক ৪২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আঞ্চলিক সড়কে ঘটেছে ৩২৭টি, যা মোট দুর্ঘটনার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও হার যথাক্রমে ২৮ দশমিক ৭ ও ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং শহরের সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও হার যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৯ ও ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাকি ৭৮টি (৬.০১ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্যান্য স্থানে।

প্রতিবেদনে সময়ভিত্তিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ৩৭৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে, যা মোট দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দুপুরে ও রাতে ঘটেছে যথাক্রমে ৩৬৪টি ও ২৪৭টি, যা মোট দুর্ঘটনার যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৯৫ ও ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এছাড়া ১৬৩টি ঘটেছে বিকালে, যা মোট দুর্ঘটনার ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ। অন্যান্য সময়ে ঘটেছে বাকি ১৫২টি (১১.৬৭ শতাংশ) দুর্ঘটনা।

দুর্ঘটনার ১৬ কারণ : পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার ১৬টি কারণ চিহ্নিত করেছে এসসিআরএফ।

সেগুলো হলো- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ও অসুস্থ চালক, গাড়ির বেপরোয়া গতি, প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ওভারটেকিং, নিয়োগপত্র, সাপ্তাহিক ছুটি ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকায় চালক ও সহকারীদের মানসিক অবসন্নতা, বিভিন্ন স্থানে সড়কের বেহাল দশা, জাতীয় মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, দূরপাল্লার সড়কে বাণিজ্যিকভাবে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল চলাচল, মহাসড়কে স্বল্পগতির তিন চাকার যানবাহন চলাচল, তরুণ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়মণ্ডদুর্নীতি, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সাধারণ মানুষের সচেতনতার ঘাটতি ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকা, চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, প্রচলিত আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শিথিলতা এবং বিভিন্ন টার্মিনাল ও সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি।

১২টি বাংলা জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ৯টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থা এবং ৬টি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা এড়াতে পদ্মা সেতুর ওপর মোটরসাইকেল চলাচলের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা ও ঈদযাত্রায় সব মহাসড়কে এ বাহন নিষিদ্ধ ঘোষণার সুপারিশ করেছে এসসিআরএফ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত