ছাত্রলীগ ইস্যুতে উত্তপ্ত বাকৃবি
আন্দোলনে শিক্ষক, কর্মচারীরা
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
ছাত্রলীগের নানা অপকর্ম ও অফিসার্স পরিষদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মদত দেয়ার অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। এ ঘটনায় আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং চারটি কর্মচারী সংগঠন। এতে প্রশাসনিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল রোববার দিনভর এসব ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) কক্ষে অবস্থান নিয়ে অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মচারী পরিষদের নেতাকর্মী এবং তিন নারী শিক্ষক।
একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ, চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী পরিষদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নামের চার কর্মচারী সংগঠন।
কারিগরি কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুকুল ইসলাম জানান, পহেলা এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল্লাহকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদির অনুসারি আকাশ ও তার সঙ্গীরা। ঘটনার বিচার দাবিতে টানা কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে নামে চারটি কর্মচারী সংগঠন।
এ নিয়ে গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিষয়টি সুরাহা করার জন্য চার কর্মচারী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে অফিসার্স পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করায় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শনিবার রাতে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসে কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা, আহত কর্মচারীকে আর্থিক সহযোগিতা এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির আশ্বাস দেয়া হয়। তবে, এই আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে কর্মচারী সংগঠনগুলো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবৈধ মদত দেয়ার অভিযোগে দিনভর ভিসি কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। এতে দিনভর প্রশাসনিক কর্মকান্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মামনুর রশিদ জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অফিসার্স পরিষদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। যথাসময়ে নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচন কমিশন গঠন না করে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। এতে মদত দিচ্ছেন ভিসি।
অফিসার্স পরিষদের সাবেক সভাপতি আরিফ জাহাঙ্গীর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২জন কর্মচারীর বেতন থেকে জনপ্রতি ১৮শ টাকা করে কেটে নেয়া হয়েছে। অথচ লিখিতভাবে বেতন থেকে কোনো ধরনের টাকা না কাটতে ভিসি বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা টাকা ফেরত চেয়ে এবং অফিসার্স পরিষদের অবৈধ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ভিসি কক্ষে অবস্থান নিয়েছি। দাবি পূরণ না হলে আমরাদের আন্দোলন চলবে।
অপরদিকে, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ভেটেরিনারি অনুষদের এক নারী শিক্ষিকার কক্ষে ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদের নেতৃত্বে হামলা ও ভাংচুর করে এক পরীক্ষার্থীকে মারধর এবং তিন নারী শিক্ষিকা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার বিচার চেয়ে ভিসি কক্ষে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে লাঞ্ছিত শিক্ষিকা প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম, প্রফেসর ড. আফরিনা মোস্তারিন ও পপি খাতুন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্যাতিত শিক্ষিকা পূর্বা ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের হামলা ও লাঞ্ছিতের ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দায়িদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো তারা অভিযোগের মূল বিষয় পাশ কাটিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নামে অভিযুক্তদের মদত দিচ্ছে। এ অবস্থায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।
এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান তার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত বিষয়টি সামাধান হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে অফিসার্স পরিষদের কাউকে এককভাবে মদত দেয়ার কিছু নেই দাবি করে তিনি বলেন, সংগঠন গঠনতন্ত্র মেনে চলবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এসময় তিন নারী শিক্ষিকার অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের ডেকে তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে, এই তদন্তে ঘটনার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কূটকৌশল করা হচ্ছে বলে খোদ ভিসির সামনেই অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিক্ষিকা প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম। এদিকে, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্যাতিত শিক্ষক ও কর্মচারীরা ভিসি অফিসের অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় অবস্থানে ছিল বলে জানা গেছে।