রামুতে গরু জব্দ
বিজিবি-কারবারি সংঘর্ষ : নিহত ১
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের রামুতে ‘জব্দ করা গরু ছিনিয়ে নিতে’ বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছে চোরাকারবারিরা। তাদের নিক্ষেপ করা ইট-পাটকেল থেকে আত্মরক্ষায় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বিজিবি। সেই গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান রড-সিমেন্টের দোকানের শ্রমিক আব্দুল জব্বার। শনিবার রাত ৯টার দিকে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান শামসুল আলম।
নিহত জব্বার (৪০) রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ পশ্চিম পাড়া এলাকার মৃত জাকের আহমদের ছেলে। তিনি বাজারের রড-সিমেন্টের দোকানে মালামাল ওঠাণ্ডনামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তবে, বিজিবি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে- নিহত ব্যক্তি চোরাকারবারি সদস্য। রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলম বলেন, আমি অসুস্থ। তাই বাসা থেকে বের হয়নি। তবে, স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি, শনিবার রাতে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ৫-৬ টি গরু জব্দ করে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। জব্দ গরুগুলো হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পাচারের সঙ্গে জড়িতরা তা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়।
এক পর্যায়ে পাচারকারিরা বিজিবির সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ঢিল ছুঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। কৌতুহলবশত তা দেখছিল স্থানীয়রা। এসময় নির্মাণ সামগ্রী বিক্রয়কারি মহিবুল্লাহর দোকানে মালামাল ওাঠাণ্ডনামা করা শ্রমিক জব্বারও তা দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন আরো একাধিকজন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এদিকে, বিজিবি-চোরাকারবারি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দোকানকর্মীর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় নিহতের মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে স্বজনদের কাছে তুলে দেয়া হয়। রামুর কাউয়ারখোপ ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউপি সদস্য আরো বলেন, মরদেহ এলাকায় নিয়ে গিয়ে স্বজনদের তুলে দেয়ার পর আছরের নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. রিপন চৌধুরী জানান, রামুর ঘটনায় নিহতের মরদেহ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে আনা হয়। এ ঘটনায় আহত বিজিবি হাবিলদার মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, নায়েক মো. লুৎফর রহমান ও নায়েক মো. আবুল কালাম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি টান্টু সাহা জানান, রামুতে বিজিবির সঙ্গে গরু চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। মরদেহ নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে ছিল।
নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এজেডএম সেলিম জানান, গতকাল ভোরে মরদেহ বিজিবি নিয়ে গেছে। সম্ভবত ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
বিষয়টি নিয়ে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে, শনিবার গভীর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়ন পরিচালিত হোয়াইটঅ্যাপ গ্রুপে এবং গতকাল সকালে বিজিবির সদর দপ্তর থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলামের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, শনিবার রাতে সীমান্তের চোরাই গরু জব্দ করে টহল দল পায়ে হেঁটে ফেরার সময় কাউয়ারখোপ এলাকায় সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী, দুষ্কৃতিকারী ও স্থানীয় সহযোগী প্রায় ২০০ হতে ৩০০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিশোঠা ও ইটপাটকেলসহ বিজিবি টহল দলের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় বিজিবির তিন সদস্য গুরুতর আহত হন। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, এসময় টহল দল সরকারি জানমাল রক্ষার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হলে একজন চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি ক্রীচ ও একটি দা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে বার্তায়।
রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হোসাইন জানান, শনিবার রাতে কাউয়ারখোপে বিজিবির সঙ্গে চোরাকারবারিদের সংঘর্ষের খবর শুনেছি। হতাহতের খবর শোনা গেলেও হতাহতের কোনো নিশ্চিত তথ্য তার কাছে নেই। নিহত জব্বারের স্ত্রী জাহেদা বেগম (২৮) বলেন, আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। এটা চেয়ারম্যানসহ এলাকার সবাই জানেন। অথচ আমার স্বামীকে এখন চোরাকারবারি সদস্য বলে প্রচার করা হচ্ছে। স্বামী মারা গেছে। চার সন্তানকে কীভাবে লালন-পালন করব?