বিক্রির লক্ষ্য ২৫-৩০ কোটি টাকা
ঈদ ঘিরে এখন কর্মমূখর রূপগঞ্জের জামদানি পল্লি
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রিয়াজ হোসেন, রূপগঞ্জ
প্রাণঘাতি করোনা মহামারির কারণে কয়েক বছর দাঁড়াতে না পারলেও এবছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জামদানি ব্যবসায়ী ও তাঁতিরা। বর্তমানে সুতাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম খানিকটা বেশি হলেও বিগত সময়ের লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় ঈদকে সামনে রেখে কর্মমুখর হয়ে উঠেছে ২০০ বছরের পুরোনো হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী নোয়াপাড়ার জামদানি পল্লি। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধীকারী হিসেবে ঢাকাই জামদানি নারীদের কাছে এক পরিচিত নাম। ২০০ বছরের পুরোনো হাতে তৈরি এই ঐতিহ্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে তৈরি হয়। দেশ ও বিদেশে এ জনপ্রিয় জামদানি শাড়ি ভালোবাসেন না এমন বাঙালি নারী খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। প্রাচীনকালে ঢাকাই মসলিনের উপর যে জ্যামিতিক নকশাদার বা বুটিদার বস্ত্র বোনা হতো তারই নাম জামদানি। কালের বিবর্তনে মসলিন শাড়ি হারিয়ে গেলেও রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া গ্রাম ও এর আশপাশে প্রায় ২০০ বছর ধরে টিকে আছে জামদানি শিল্প।
শিল্পনগরী জামদানি পল্লি (বিসিক) জানায়, বর্তমানে নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লিতে ২ হাজার ৫৬০টি পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এ পল্লিতে ঝুমকা, পান্না হাজার, সাবুদানা, কলসফুলসহ হরেক বাহারি নামের নকশায় তৈরি হয় জামদানি শাড়ি। প্রকারভেদে এসব নকশায় তৈরি একেকটি শাড়ি বিক্রি হয় দুই হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত। স্থানীয় জামদানি ব্যবসায়ী ও তাঁতিরা জানান, গত কয়েকবছর মহামারি করোনায় জামদানি তাঁতিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার পহেলা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তাদের আশা অনেক ভালো বেচাকেনা হবে। তবে এ বছর সুতাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম অনেকটা বেশি হওয়ায় জামদানি কাপড় তৈরি করতে খরচও পড়ছে অনেকটা বেশি। সে অনুপাতে আগের চেয়ে বেশি দামে কাপড় বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছে জামদানি ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া বাজারে ভারতীয় নিম্নমানের সুতা ও কাপড়ের সয়লাবের কারণে তারা অনেকটা বিপদগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী ও তাঁতিরা।
জামদানি ব্যবসায়ী হামিদুল্যাহ জানান, করোনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত জামদানি কাপড় বিক্রির বড় একটা অংশ দখল করেছে অনলাইন বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনলাইন বাজারে কাপড় কেনায় ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এমনকি অনেকে হচ্ছে প্রতারিতও। তবে জামদানি পল্লি, জামদানির হাট থেকে কাপড় কিনলে সঠিক দামে প্রকৃত জামদানি কাপড় পেত ক্রেতারা। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদকে সামনে রেখে এখন বেড়েছে বেচাকেনা।
এদিকে জামদানি পল্লিকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জের তারাব নোয়াপাড়া জামদানি পল্লিতে ও পার্শ্ববর্তী ডেমরা বাজরে সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ভোর থেকে ৯টা পর্যন্ত বসে জামদানির হাট। হাটে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার নারী পুরুষ তাদের প্রিয় জামদানি শাড়ি ও থ্রি-পিস কিনতে ভীড় জমায়।
রাজধানী গুলশান থেকে আসা জামদানি ক্রেতা আফরোজা আক্তার রুমা বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মলে জামদানি শাড়ি এখানকার হাট থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে হয় বলে হাট থেকে দেখে শুনে তাদের পছন্দের কাপড় কিনে নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জামদানি বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন বলেন, জামদানি পল্লিতে জামদানি উৎপাদন প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে জামদানি কাপড় উৎপাদন যেমন বাড়ে, তেমন বাড়ে এর বিক্রি। প্রতিদিন এখানে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে। জামদানি পল্লির অবস্থা স্বাভাবিকভাকে আগের চেয়ে অনেক ভালো। জামদানি পল্লিতে প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এবার ঈদকে সামনে রেখে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লেনদেন হবে বলে তিনি আশাবাদ। এব্যাপারে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, নকল জামদানি শাড়ি সব সময় ছিল। আমরা এর প্রতিকারের ব্যবস্থাও করি। আবার ঠিকও হয়ে যায়। তবে বর্তমানে জামদানি কাপড়ের বাজার অনেকটা ভালো, বেচাকেনাও ভালো। যারা জামদানি চিনে তারা সঠিক জামদানি কাপড় কিনে। আর যারা অতিমূল্যের জামদানি কাপড় চিনতে ও কিনতে পারেন না তারাই নকল জামদানি কিনে আসল জামদানির অনুভব করে।