রাজবাড়ী জেলার মাটি রসুন চাষাবাদে উপযোগী হওয়ায় চলতি মৌসুমে এ জেলায় রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাম্পার ফলন ও স্থানীয় বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে বিগত মৌসুমে এ জেলায় রসুনের আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, জেলায় প্রায় ৩০ হাজার কৃষক এ বছর রসুন চাষাবাদ করেছেন। হেক্টর প্রতি রসুনের উৎপাদন এবার ৭ মেট্রিক টন। সে হিসেবে রাজবাড়ীতে ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে এ বছর ২৪ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদিত হয়েছে। ভালো মানের প্রতি মণ রসুন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বিল পাকুরিয়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা মাঠ থেকে রসুন সংগ্রহ করছেন। রসুন চাষি নজির মন্ডল (৫০) বলেন, এ বছর ২২ শতাংশ জমিতে রসুনের আবাদ করেছি। এবার মজুরিসহ সার, ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ বেড়ে গেছে। গত মৌসুমে রসুন বেচে লোকসান হয়েছে, তারপরও একটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে রসুন চাষ করছি। আরেক চাষি ইসরাফিল বলেন, চলতি মৌসুমে দেড় পাকি জমিকে উচ্চ ফলনশীল জাতের রসুনের আবাদ করেছি। এ বছর আবাদে খরচ বেশি লেগেছে। জমি চাষে ২ হাজার বীজ কিনেছি ৪ হাজার টাকা দিয়ে, সেচ দিতে ২ হাজার, ৩ বার জমি কোপাতে শ্রমিক খরচ সাড়ে ৭ হাজার, সার দিতে আড়াই হাজার, ওষুধ কিনেছি দেড় হাজার, রসুন ওঠাতে শ্রমিক খরচ ২ হাজার। এক পাকি জমিতে কাচা রসুন পাব ১৫ মণ। স্থানীয় বাজারে ভালো মানের রসুন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। রসুন চাষি ফরিদ বলেন, ১ পাকি জমিতে রসুন করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে রসুন বপন, সার, ওষুধ, কীটনাশক, সেচ, পরিচর্যা ও জমি থেকে তোলা পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় গড় ফলন কাঁচা অবস্থায় ১৫ থেকে ২০ মণ। শুকানোর পর ১০ থেকে ১৬ মণ টেকে। বিগত কয়েক বছর রসুন চাষ লাভজনক ছিল। গত ১০ বছর ধরে রসুন আবাদ করে আসছি। বাজারে ভালো দাম পেলে আমরা লাভবান হব। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জনি খান বলেন, এ বছর রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করেছেন কৃষক। উন্নতজাতের রসুন চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত ও সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তাই এবারও রসুনের বাম্পার ফলন হবে আশা করছি। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।