সুসংবাদ প্রতিদিন

গোপালগঞ্জে কচুরিপানার বেডে সবজির সমারোহ

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

কচুরিপানার ভাসমান বেডে সাধারণত গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতকালে শাক, সবজি ফলে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে এ বছর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার জলাভূমি জমিতে বসন্তকালেই কচুরিপানার ভাসমান বোডে শাক-সবজি ফলেছে। ভাসমান বেডে এখন লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কচু, কচুর লতি, লালশাক, ডাটাশাক, গিমা কলমি, শশা, করলা উচ্ছে ও বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া সফরে এসে পাটগাতী ইউনিয়নের পূবের বিল পরিদর্শন করেন। এ জমিগুলো বছরের ৮ থেকে ৯ মাস জলাবদ্ধ থাকে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলাভূমির অন্তর্গত এ অঞ্চলের জমিগুলোতে কচুরিপানার ভাসমান বেডে শাক, সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার তত্ত্বাবধানে তার নিজ নির্বাচনি এলাকার টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার অনাবাদি ও জলাভূমিতে নিমজ্জিত জমিতে ভাসমান বেডে চাষাবাদ শুরু করা হয়। তিন মাসের মধ্যে এসব পতিত জমি ভরে উঠেছে শাক, সবজি ও ফলে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জামাল উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের পূবের বিলের সীমানার খালের ১ কিলোমিটারজুড়ে কচুরিপানার ভাসমান বেডে শাক ও সবজির আবাদ করা হয়েছে। এখানে এখন শাক, সবজির সমরোহ। এখান থেকে অন্তত ৭ লাখ টাকার সবজি উৎপাদিত হবে। কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস জানান, কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি-ধারবাসাইল খালের ৩ কিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানার ভাসমান বেডে এ আবাদ করা হয়।

এছাড়া কোটালীপাড়ার দেবগ্রাম ও কুঞ্জবন আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন খালে ৬০ মিটার লম্বা ৫০টি বেডে শাক-সবজি ফলেছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাসমান বেডে মশলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের আওতায় এগুলো করা হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার শাক, সবজি ও ফল উৎপাদিত হবে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা এটি করে দিলেও কৃষক ও আশ্রয়ণের বাসিন্দারা এর সুফল পাচ্ছেন। তারা এখানে উৎপাদিত শাক-সবজি দিয়ে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছেন। বাড়তি শাক-সবজি তারা বাজারে বিক্রি করে অর্থ আয় করতে পারছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, বর্ষাকালে টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার অধিকাংশ জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তাই কৃষকরা কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে শাক- সবজি, ফল ও মশলার আবাদ করে আসছেন। সম্প্রতিকালে শীতের সবজিও ভাসমান বেডে উৎপাদিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. শহিদ উল্লা খন্দকারের দিকনির্দেশনা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদের সহযোগিতায় আমরা আনাবাদি জমি চাষবাদের আওতায় আনতে কান্দি-ধারবাসাইল খাল পরিষ্কার ও খনন করি।

এ কারণে কান্দিবিলের জলাবদ্ধ ও আনাবাদি ৪৪০ হেক্টর জমি ধান চাষাবাদের আওতায় এসেছে। খালের ওই কচুরিপানা দিয়ে খালের ৩ কিলোমিটারজুড়ে ভাসমান বেড তৈরি করি।

আমাদের সহযোগিতায় কৃষকরা এখানে গত ২১ জানুয়ারি শাক, সবজি ও ফলের আবাদ করে। তাই বসন্তের এ অসময়ে এখানে প্রচুর শাক, সবজি ও ফল ফলেছে। এছাড়া দেবগ্রাম ও কুঞ্জবন আশ্রয়ণ কেন্দ্র সংলগ্ন খালে আমরা ৫০টি বেড করে দিয়েছি। এখান থেকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বসিন্দারা শাক, সবজি ও ফল খেতে পারছেন।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের মাচারতারা গ্রামের প্রিয়তাজ বেগম ও পুষ্প রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার জন্য আমরা গর্বিত।

আমরা তাকে প্রাণের চেয়েও অধিক ভালবাসি। তিনি আনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় ভাসমান বেডে সবজি করেছি। এ শাক-সবজি দিয়ে সংসারের চাহিদা মিটাচ্ছি। বাড়তি সবজি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। জলাবদ্ধ ও আনবাদি জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন আমাদের আবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।

তালপুকুরিয়া গ্রামের অমিতাভ মণ্ডল ও মিলন মধু বলেন, অসময়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় ভাসমান বেডে চাষাবাদ করে আমরা শাক-সবজির এবং ফলের ভালো ফলন পেয়েছি। চৈত্র মাসে আমাদের তেমন কোনো আয় থাকে না। তাই এখান থেকে আমাদের বেশ আয় হচ্ছে। আমাদের এ চাষাবাদ শিখিয়ে দেয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানাই।

দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আল আমিন হোসন ও জুয়েল কাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর ও জায়গা দিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভাসমান বেড করে দিয়েছে।

এখান থেকে শাক, সবজি ও ফল পাচ্ছি। অসময়ে এমন সরবরাহ পাব তা কল্পনাও করিনি। এগুলো খেয়ে আমরা ভালো আছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানাই।