ঢাকা ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যাপক মূল্যস্ফীতি

পাকিস্তানে ঈদের আনন্দ মলিন

পাকিস্তানে ঈদের আনন্দ মলিন

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটিতে নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে এবং এই সংকট প্রতিদিনই বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছে ইসলামাবাদ। এই পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজান মাস শেষে ঈদ আসন্ন হলেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এবার পাকিস্তানিদের ঈদের আমেজ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রমজান মাস শেষে পবিত্র ঈদ উপলক্ষে পাকিস্তানের ছোট দোকান এবং ব্যবসাগুলো আগে নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি অর্থ রোজগান করতে পারত। কিন্তু এ বছর তাদের অনেকেই উদ্বিগ্ন যে, বাড়তি রোজগার তো দূরের কথা এবার তারা তাদের মাসিক ভাড়া দেয়ার মতো যথেষ্ট অর্থই আয় করতে পারবেন কিনা।

মূলত বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবের রাজধানী শহর লাহোরে ব্যাগ, গহনা এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রির দোকান চালান শেহজাদ আহমেদ নামে এক দোকানি। তিনি বলেছেন, ‘কোনো গ্রাহক নেই, ক্রেতা নেই।’

এএফপি বলছে, ২২ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানে গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ৩৫.৪ শতাংশ ছুঁয়েছে। গত ১২ মাসে পাকিস্তানে খাদ্যের দাম ৪৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে, অন্যদিকে একই সময়ে পরিবহণ খরচ বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৬ বছরে এই পরিমাণ মূল্যস্ফীতি কখনো দেখেনি দেশটির জনগণ।

পাকিস্তান গভীরভাবে ঋণে জর্জরিত এবং খেলাপি হওয়া এড়াতে বর্তমানে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছে। বার্তাসংস্থাটি বলছে, আইএমএফের কাছ থেকে ৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা পেতে পাকিস্তানকে কঠোর সংস্কার নীতি চালু করতে হবে।

মূলত বছরের পর বছর ধরে আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে সৃষ্ট বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট এবং বিধ্বংসী বন্যার ফলে গত বছর পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে চলে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

রমজানের শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের সময় সারা বিশ্বের মুসলমানরা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সাথে খাওয়া দাওয়া ও উপহার বিনিময় করেন। একই সঙ্গে নতুন জামাকাপড় ও জুতা পরিধান করে একসঙ্গে আনন্দ উদযাপন করেন তারা। তবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের ফলে পাকিস্তানে সাধারণভাবে যেসব বাজার প্রাণবন্ত থাকে সেগুলোতেও এখন অনেকটা বিষণ্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। পাকিস্তানি ব্যবসায়ী সাইফ আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আর এর কারণ হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি।’

কাঁচের চুড়ি এবং ইমিটেশন গহনা বিক্রির ছোট দোকান পরিচালনাকারী শেখ আমির বলছেন, প্রতি বছরই ঈদে তিনি সাধারণত সারা বছরের জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হন। তবে বর্তমানে এটি খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি বলছেন, ‘আমরা কেবল এই আশায় দিন পার করছি যে, আমরা এবার আমাদের দোকানের ভাড়া পরিশোধ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করতে সক্ষম হবো।’

সাধারণত ঈদের এই মৌসুমে পাকিস্তানজুড়ে প্রধান প্রধান শপিংমল ও এলাকাগুলোতে কেনাকাটায় মানুষ অনেক অর্থ ব্যয় করে থাকেন। শহুরে বিপণিকেন্দ্র, বাজার এবং দোকানগুলো মধ্যরাতের পরও খোলা থাকে। বছরের এই সময়টাতে গ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য বিশেষ অফার বা ছাড়ে বিক্রয় করে থাকেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। তবে এই বছর সব ধরনের পণ্য বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ব্যবসায়ী সাইফ আলীও এবারের ঈদে শত শত এমব্রয়ডারি করা শাল বিক্রি করার আশা করেছিলেন। তবে তিনি বলছেন, ‘(এবার) আমাদের ব্যবসা ধীর হয়ে গেছে।’ সাত কন্যাসন্তানের জননী ফাতিমা আজহার মেহমুদের জন্য এবারের ঈদ হবে কম খরচের। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে তাদের (সন্তানদের) জন্য কেনাকাটা করতে হবে এবং একইসাথে আমাকে বাড়ির জন্য জিনিসও কিনতে হবে।’

ফাতিমা পুরোনো লাহোর এলাকায় কাপড়ের কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন এবং মেয়েদের জন্য রেডিমেড জামাকাপড় কেনার পরিবর্তে তাদের ঈদের পোশাক বাড়িতে সেলাই করার পরিকল্পনা করেছেন। ফাতিমার ভাষায়, ‘আমাদের রেশন কিনতে হবে, বাচ্চাদের জন্য জিনিস কিনতে হবে... এবং আমাদের ভাড়াও শিগগিরই বকেয়া হতে চলেছে। সব ধরনের সমস্যা একই সময়ে আমাদের সামনে চলে এসেছে।’

অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতি কারণে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমনা আসিমকেও। এই বছর জিনিসপত্রের দামে হতবাক হয়ে তিনি কেবল তার বাড়ির বাচ্চাদের উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাপ্তবয়স্ক আত্মীয়দের কাউকে কোনো উপহার তিনি এবার দিতে পারছেন না।

আমনা আসিম বলছেন, ‘বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করা আবশ্যক। ঈদে আমরা বাচ্চাদের (নতুন কিছু কিনে দেয়া থেকে) বাদ দিতে পারি না। আমরা নিজেদের জন্য কিছু না কিনলেও বাচ্চাদের জন্য তো কিছু কিনতেই হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত