বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাঙামাটি প্রতিনিধি

দিনটি ছিল ১৯৭১ সালে ২০ এপ্রিল। ঘটনাস্থল রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকা। সময়টা তখন দুপুর বেলা। নদী পথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিশাল বহর অতর্কিত হামলা চালায়। মর্টার ও ভারী অস্ত্রের প্রচন্ড গোলা বর্ষণের মুখে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। উপায়ন্তর না দেখে একাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ। শত্রু পক্ষের আক্রমণের মুখে নিজেকে অবিচল রেখে নিজের মেশিনগান থেকে মুহুর্মুহু ব্রাশ ফায়ারে পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদারদের দুটি লঞ্চ ও সাতটি স্পিডবোট পানিতে ডুবে যায় এবং দুই প্লাটুন শত্রু সৈন্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু বাধ সাথে একটি মর্টারের গোলা। শত্রু পক্ষের ছোড়া সেই মর্টারের গোলাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাতির এই বীর সন্তান রাঙামাটি-মহালছড়ি বুড়িঘাট নৌপথে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদারদের গোলার আঘাতে তিনি শহীদ হন। স্থানীয় বাসিন্দা দয়াল চন্দ্র চাকমাসহ কয়েকজন মিলে তার শরীরে ছিন্নভিন্ন অংশ একত্রিত করে বুড়িঘাটের হ্রদ বেষ্ঠিত একটি ছোট দ্বীপে তাকে সমাহিত করেন। পরবর্তীতে দয়াল চন্দ্র চাকমার সহায়তায় ঘটনার দীর্ঘ ২৫ বছর পর নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের চিংড়িখালে পাশে ছোট একটি নির্জন দ্বীপে তার সমাধি চিহ্নিত করা হয়। দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দেয়া বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের আজ ৫২তম শাহাদাৎবার্ষিকী। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের এই দিনে রাঙামাটির বুড়িঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাঙ্গে সম্মুখ সমরে মর্টার শেলের আঘাতে শহীদ হন। তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় রাঙামাটি সেক্টরে তৎকালীন ইপিআর বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক আসায় তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৪৩ সালের ১ মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম মুন্সী মেহেদি হাসান ও মুকিদুন্নেসার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আব্দুর রউফ ১৯৬৩ সালে তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এ যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নানিয়ারচর উপজেলা প্রশাসন ছাড়াও স্থানীয় বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রউফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।