দেশের বৃহত্তম ও একমাত্র কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন গত কয়েকদিনে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক হারে পানি কমে যাওয়ার কারণে ২৫০ মেগাওয়াটের উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এখন দৈনিক গড়ে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, ঠিকমতো ভারি বৃষ্টি না হলে এবং কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ না নিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
জানা গেছে, চলতি বছর শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে আসায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটি ইউনিট সচল রয়েছে। যা থেকে মাত্র বর্তমানে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বাকি চারটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের ভরা মৌসুমে পাঁচটি ইউনিট থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ৭৬ ফুট এমএসএল। যেখানে এই এপ্রিল মাসে পানি থাকার কথা ৮১ ফুট এমএসএল। অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই বিপর্যয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মহসীন রানা জানান, নির্দিষ্ট সময়ের আগে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়া কোনো ভালো খবর নয়। পাহাড়ের বন উজার হওয়া, নতুন বনায়নের উদ্যোগ না নেয়া এবং গত কয়েক বছর ধরে অনাবৃষ্টির কারণে পাহাড়ের জলাধার শুকিয়ে যাচ্ছে এবং কাপ্তাই হ্রদ নাব্যতা হারাচ্ছে। যার ফলে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভর পাহাড়ের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এই কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচাতে হলে অনতিবিলম্বে ড্রেজিং করা খুবই জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক হারে পানি কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটি ইউনিট সচল রয়েছে। যার ফলে পাঁচটি ইউনিট যেখান থেকে গড়ে প্রতিদিন ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন হতো, সেখানে একটি ইউনিট থেকে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সময়মতো ভারি বৃষ্টি না হলে এবং কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি না হলে এ সমস্যা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
এদিকে রাঙামাটি শহরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। কোনোরকম শিডিউলের তোয়াক্কা না করে প্রায় এলাকায় লোডশেডিং দিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান জানান, রাঙামাটি জেলার জন্য ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেখানে বরাদ্দ পাওয়া যায় মাত্র ১২ মেগাওয়াট। তাই গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সারা দেশে কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।