দেশে দুই ঈদের সময় বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বৃদ্ধ নিবাস কেন্দ্রগুলোর বাসিন্দাদের সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যমগুলো। বৃদ্ধদের ব্যাপারে নানা জানা-অজানা ও হৃদয়বিদারক কাহিনী তুলে ধরা হয় বিভিন্ন আঙ্গিকে করা প্রতিবেদনে। মানুষ এসব অশীতিপর বৃদ্ধদের দুঃখের কাহিনী পড়ে কিংবা শুনে ব্যথিত হয়। ভবিষ্যতে নিজেকে বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দা হতে হবে কি না, সেই দুশ্চিন্তায় অনেকে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। যেসব অসহায় বয়স্ক লোক বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দা হন, তাদের সন্তানদের কথা মানুষ ক্ষণিকের জন্য হলেও মনে করে তাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করেন। আহাজারি করতে থাকেন- আহারে বেচারা কতই না অসহায়। অথচ সন্তানরা নিজে কখনো ভাবে না, তাকেও হয়তো জীবন সায়াহ্নে এসে ওই বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দা হতে হবে। একজন মানুষ তার জীবদ্দশায় তার সন্তানদের জন্য কি না করেন- এমন কোনো ত্যাগ নেই, যা তিনি তার সন্তানদের জন্য করেন না। সন্তানদের মুখের পানে চেয়ে নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে ভালো খাবার তুলে দেয়ার শাশ্বত বাসনা মানুষ আজীবন লালন-পালন করে থাকে। সন্তানের মধ্যে নিজের সুখণ্ডশান্তি খুঁজে পায়, সন্তানের কান্না থামানোর জন্য মানুষ চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধও করে। একবেলা কম খেয়ে হলেও সন্তানের পরিপূর্ণ খাবার জোগাড় করা, তার লেখাপড়া কিংবা চিকিৎসা ব্যয় বহন করে থাকে। সন্তানের চিকিৎসার জন্য সহায় সম্বল সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে শেষ পর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করে না অনেক বাবা-মা। তারপরও সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে হবে- এমন দৃঢ় মনোভাব বাবা-মা পোষণ করেন। সন্তানের চাওয়া-পাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পিতামাতার যেন কোনো বিশ্রাম নেই। সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে বাবা-মা সাধ্যমতো অর্থ ব্যয় করেন। বিশেষ করে সন্তানের বড় হয়ে ওঠার পেছনে মায়ের ভূমিকার তুলনা দেয়ার মতো কোনো কিছু পৃথিবীতে নেই। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে হলেও সন্তানের জীবন রক্ষা করার ব্রত নিয়ে মায়েরা সন্তান লালন-পালন করেন। অথচ এসব বাবা-মা কখনো ভাবেন না, তার সন্তানই তাকে একসময় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে আসবে। অথবা তাকে গরুর ঘর কিংবা রান্না ঘরের মেঝেতে রেখে তার ‘মৃত্যু’ কামনা করবে। যেখানে যে অবস্থায় থাকুক না কেন, সন্তানের প্রিয় মুখখানি দেখার বাসনা সব বাবা-মা পোষণ করেন। বৃদ্ধ, চলাফেরায় অক্ষম কিংবা রোগাক্রান্ত বাবা-মাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সঙ্গে অন্যত্র কোথাও রেখে আসার ঘটনা দিনে দিনে বাড়ছে। তবে যেসব বাবা-মা আর্থিকভাবে সচ্ছল জীবনযাপন করেন এবং যারা সচেতন তারা ‘মরার আগে একবার মর’ নীতির আলোকে বৃদ্ধ বয়সের খরচ সঞ্চয় করে থাকেন। অনেক বাবা-মা এমন নির্মম সত্যটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে আখিরাতের সঞ্চয়ের মতো দুনিয়ায় শেষ জীবনের সঞ্চয় করে থাকেন। তারা হয়তো ভাবেন, সন্তানের কাছে তাদের প্রয়োজন একসময় ফুরিয়ে যাবে, সন্তানরা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অধিক বেশি ব্যস্ত থাকবে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে সংসারের ‘বোঝা’ মনে করবে। তাদের কোনো খোঁজখবর নেবে না। একই বাড়িতে পৃথক কক্ষে সারা দিন বন্দি জীবন কাটাতে গিয়ে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সন্তানরা নিজেদের মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় তারা বাবা-মায়ের খোঁজখবর নেয়ার সময় পান না কিংবা খোঁজখবর নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে না। এমন পরিস্থিতিতে একটু সচেতন বাবা-মা নিজেকে ঘুটিয়ে নেন। সন্তানদের কাছ থেকে অবহেলার পাত্র না হয়ে দূরে কোথাও থাকার মনোবাসনা পোষণ করেন। ‘অবহেলা দিয়ে মোরে করিল পাষাণ’ এই প্রতিপাদ্যে বৃদ্ধরা সন্তানদের কাছ থেকে পালিয়ে থাকতে গিয়ে অবশেষে বৃদ্ধাশ্রম কিংবা বৃদ্ধ নিবাসে গিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তারা একসময় সন্তানের ‘সুখের’ কথা চিন্তা করে সুখণ্ডশান্তি বিসর্জন দিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে হয়তো বৃদ্ধ নিবাস কেন্দ্রের বাসিন্দা হন। আবার অনেক সন্তান আছেন, যারা তার বাবা-মাকে কথিত ভালো থাকার স্বপ্ন দেখিয়ে বৃদ্ধ নিবাসে রেখে আসেন। সন্তানের আবদার রক্ষা করতে গিয়ে বাবা-মা সন্তানের ইচ্ছার কাছে নিজে সপে দেন। নিজের কষ্টার্জিত সব সম্পদ সন্তানদের দিয়ে নিজের ব্যবহারের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে একজন বাবা-মা যখন বৃদ্ধ নিবাস কেন্দ্রের বাসিন্দা হন, তখন তার মনের মধ্যে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস বইতে থাকে। অজানা আশ্রয়ের দিকে চলে যাওয়ার সময় নিজের গড়া বাড়িঘরের দিকে বার বার তাকান। ‘বিদায় হে পৃথিবী তোমাকে বিদায়’ এমন মনোবাসনা নিয়েই একজন বৃদ্ধ তার শেষ ঠিকানায় চলে যান। তিনি জানেন হয়তো তার সন্তানরা আর তাকে কোনো দিন দেখতে যাবেন না। ঘরের রান্না করা কোনো পছন্দের খাবার তার ভাগ্যে জুটবে না। এমনকি ঈদের দিনেও নয়। বৃদ্ধাশ্রমের একজন বাসিন্দা কখনোই নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সন্তানদের পরিচয় দিতে চান না। সন্তানরা সমাজে ছোট হয়ে যাবেন, মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখবেন- এমন আশঙ্কায় তারা সব কিছু চেপে যান। অতীত ভুলে যায় তিনি কত বড় মানুষ ছিলেন, তার কত বড় প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল, তার নির্দেশনায় কত মানুষ অফিসে কাজ করতেন। কত মানুষ তাকে শ্রদ্ধা ও সমীহের চেখে দেখতেন। সেই অতীত হাতরিয়ে মিথ্যা সুখবোধ না করে অনেকেই বৃদ্ধ নিবাসে গিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তাদের এই অসহায় অবস্থা নিয়ে শুধু বছরের দুই ঈদে গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রচার করে নিজের প্রতিষ্ঠানের কাটতি বাড়ালেও সারা বছর গণমাধ্যমের কর্মীরা তাদের অসহায় অবস্থা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রচার করেন না। প্রতিনিয়ত গণমাধ্যম যদি এসব অসহায় সিনিয়র সিটিজেনদের খবর নিত, তাহলে এসব সহায় মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াত। তাহলে ঈদের দিনে এসব অসহায় মানুষ চোখের পানিতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারতেন না। সন্তানের তুলনা হয় না। তবে সন্তানের মতো ভূমিকা পালন করলে মানুষ সন্তানের কথা কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে যান। এই সামান্য সময় নিজের সন্তানের কথা ভুলে থাকার সুযোগ করে দিতে পারলে সেটাই বা কম কিসের। আমাদের দেশের বৃদ্ধদের নিয়ে যেখানে নিজের সন্তানের কোনো মাথাব্যথা নেই, সেখানে সরকার তথা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৃদ্ধদের অবশিষ্ট জীবনের দায়িত্ব নেয়া কতটা সম্ভব, সেই বাস্তবতা অনুভব করার সময় এসেছে। সিনিয়র সিটিজেন নিয়ে এই ভাবনা দূর করার জন্য দরকার একটি সমন্বিত উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা।
এবারের ঈদে একটি অনলাইন পোর্টালের খবরে এসেছে- বৃদ্ধাশ্রমে এবার যাদের ঈদ করতে হয়েছে, তারা সারা দিনই ছটফট করেছেন সন্তানদের মধ্যে কেউ হয়তো আসবে। সঙ্গে করে আনবে আদরের নাতি-নাতনিদের। অথচ দিনশেষে কেউই আসেনি। মনের দুঃখণ্ডকষ্ট মনে পোষণ করে অনেক বৃদ্ধ ঈদের সেমাইয়ে স্বাদ পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। কেউ কেউ সন্ধ্যায় একসময়ের প্রিয় সন্তানকে ফোন করেছেন। কিন্তু অনেকে ফোন ধরেননি।
বাংলাদেশের মানুষ নিবিড় পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ। একে অপরের দুঃখকষ্টে সমানভাবে ব্যথিত হন। এটা দীর্ঘদিনের প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে বর্তমান প্রজন্ম এমন কী শিক্ষা পেল, যে তারা তাদের জন্মদাতা পিতামাতাকে ভুলে থেকে দিব্যি ঈদের আনন্দ করবে। বাবা-মা মারা গেলে তাদের ছাড়া ঈদ করতে দম বন্ধ হয়ে আসারই কথা। বৃদ্ধ নিবাসে একাকীত্ব জীবন বেছে নেয়া বাবা-মাকে বাদ দিয়ে ঈদ উদযাপন করার মতো মন-মানসিকতা পশ্চিমা সমাজের মতো আমাদের সমাজেও গড়ে উঠেছে। বৃদ্ধাশ্রমে যারা থাকেন, তাদের অধিকাংশই সম্ভ্রান্ত পরিবারের। কেউ পেশাগত জীবনে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা বেরসকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা। কিন্তু জীবনের অসহায় মুহূর্তে পরিবার থেকে এক রকম বিতাড়িত তারা। মানুষ স্বাভাবিক কারণে শিশুদের ভালোবাসে, তাদের আদর সোহাগ করে। অথচ আমাদের সমাজ বৃদ্ধদের বোঝা হিসেবে মনে করার শিক্ষা অনেকেই পেয়েছে। ঈদ মানে আনন্দ হলেও বৃদ্ধাশ্রমে ঈদ মানে অভিমান আর চাপা কষ্টের। কখনো কখনো কেউ মুখ গুমরে কাঁদেন কেউ অবসাদগ্রস্থ হয়ে নীরবে সময় কাটান। থেকেও কেউ না থাকার বেদনা ভুলে থাকার মতো মানসিক অবস্থা সবার থাকে না। ঈদের দিন যত ভালো খাবারই দেয়া হউক না কেন, কোনো কিছুইতে মন ভরে না। বাংলাদেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার মতো ব্যবস্থা খুবই প্রতুল। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত ছয়টি প্রবীণ নিবাসের প্রতিটিতে ৫০ জন করে থাকার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে সাভার ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে, দেশে এখন ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা হলো মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০৩০ সাল নাগাদ ১১ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। অন্যদিকে ২০৩০ সাল নাগাদ ৬৫ বছরের বেশি মানুষের সংখ্যা হবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০৪০ সালে হবে ১১ দশমিক ১ শতাংশ। প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমশ : বাড়তে থাকলেও ভবিষ্যতে এই জনগোষ্ঠীর সেবা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং জনবলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এএসএম আতীকুর রহমানের মতে, প্রবীণ আসলে তিন ধরনের। ৬০ থেকে ৭০ বয়সীরা তরুণ প্রবীণ, ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সিরা মধ্যম প্রবীণ এবং ৮০ থেকে তদূর্ধ্বরা অতি প্রবীণ। ২০৬১ সাল নাগাদ প্রবীণের মোট সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে অথচ এখনো এ বিষয়ে কারো কোনো দৃষ্টিই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামের মতে ২০৩৫-৩৭ সাল সময়ের পর থেকেই মূলত তরুণদের তুলনায় ক্রমশ বয়স্কদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে এবং ২০৪৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশ পরিণত হবে বয়স্কদের সোসাইটিতে।
‘একদিকে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। আবার অন্যদিকে প্রজনন হার কমছে। সে কারণেই বয়স কাঠামোর মধ্যে একটা পর্যায়ে গিয়ে বয়স্কদের সংখ্যা বাড়বে। যে অভিজ্ঞতা জাপানের হয়েছে। এখন চীনের হচ্ছে। সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশকেও হতে হবে বলে জানান তিনি। অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামের অভিমত, আধুনিকায়ন আর জীবনের প্রয়োজনে পরিবারগুলো ছোট হচ্ছে আবার অনেক পরিবারের সন্তানরাই শিক্ষা ও কাজের প্রয়োজনে পরিবারের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন এসব পরিবার কিংবা যেসব বৃদ্ধ দম্পতির সন্তান নেই, তাদের কী হবে। রাষ্ট্র ও সমাজকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় সহজে গ্রহণ হবে- এমনভাবে সরকারি বা বাণিজ্যিকভাবে এল্ডারলি কেয়ার বা ওল্ড হোমের ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প হবে না।
জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ৬০ বছরের বেশি ব্যক্তিকে প্রবীণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী বয়স্ক ভাতা পায় প্রায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতি মাসে একজন ব্যক্তিকে ৫০০ টাকা ভাতা দেয়া হয়। বাংলাদেশে দরিদ্র প্রবীণদের সংখ্যা বেশ বড়। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের বয়স সত্তরের বেশি। বাংলাদেশে প্রবীণদের অধিকার সমুন্নত রাখা এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার ২০১৩ সালে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল, যেখানে প্রবীণদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, দারিদ্র্য দূর করা, আর্থিক নিরাপত্তা, প্রবীণদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পুষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কেমন পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা বলা হয়েছে। আর এর উদ্দেশ্য হলো প্রবীণদের মর্যাদাপূর্ণ, দারিদ্র্যমুক্ত, কর্মময়, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ সামাজিক জীবন নিশ্চিত করা।
বৃদ্ধ অবস্থায় পিতামাতাকে সন্তানের কাছ থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য ২০১৩ সালে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’ প্রণয়ন করে সরকার, যেখানে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী কোনো সন্তান তার পিতা-মাতাকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধ নিবাস বা অন্য কোথাও আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। পিতা-মাতার জন্য ভরণ-পোষণ এবং চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই আইনে এবং সন্তানরা যদি এসব দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আইন অনুযায়ী পিতা-মাতা আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অধ্যাপক মইনুল ইসলামের ভাষ্য, গ্রাম থেকে চাকরি ও শিক্ষার প্রয়োজনে এখন বহু মানুষ শহরে এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে। আবার গ্রামেও যৌথ পরিবার কমে যাচ্ছে, ফলে সেখানেও অনেক বৃদ্ধ দম্পতি বা প্রবীণরা সংকটে পড়ছেন।
অধ্যাপক এএসএম আতীকুর রহমান বলেন, দেশের মানুষ সবচেয়ে কম চিন্তা করেন তার বার্ধক্য নিয়ে আবার কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেই যাতে করে একজন প্রবীণ ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, সমবয়সীদের সাথে সময় কাটানো এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেন।
তিনি জানান, প্রবীণদের জন্য চারটি বিষয় অপরিহার্য। এগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, খাদ্য ও বিছানার নিরাপত্তা, সমবয়সিদের সাহচর্য, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। অনেক সময় ছেলেমেয়ে থাকলেও এগুলো হয় না। এজন্যই দরকার প্রাতিষ্ঠানিক কেয়ার বা যত্নের ব্যবস্থা। তিনি জানান, বিদেশে যেমন ওল্ড হোম বা বৃদ্ধাশ্রম আছে, তেমনি বাংলাদেশের প্রতি উপজেলায় এখন প্রবীণ নিবাস গড়ে তোলা দরকার; যেখানে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রবীণরা থাকতে পারবেন। অধ্যাপক এএসএম আতীকুর রহমান বলেন, ‘আমার বার্ধক্য আমার’- এটা সবাইকে চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, পুষ্টির কথা বললে প্রথমেই সবাইভাবে শিশু বা মায়ের কথা। কিন্তু এই পুষ্টি যে প্রবীণের জন্য কতটা বেশি দরকার, সেটি কেউ ভাবছে না।