চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বইয়ের সংশোধনী প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাস পার হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার সংশোধনী প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সেশন রুটিন এবং এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রকাশ করেছে এনসিটিবি।
সংশোধনীগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২০১টি ও সপ্তম শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২২০টি ভুলের সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। এর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দেয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংশোধনী ৭০টি, আর সবচেয়ে কম বাংলা বইয়ে চারটি।
এ ছাড়া ইংরেজি বইয়ে ৩৫, গণিতে ৫, বিজ্ঞান ৭, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৩৬, ডিজিটাল প্রযুক্তি ১, জীবন ও জীবিকা ১৫, শিল্প ও সংস্কৃতি ৫, ইসলাম শিক্ষা ৭ এবং হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১৬টি সংশোধনী দেয়া হয়েছে। আর সপ্তম শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২২০টি ভুলের সংশোধনী দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৫টি ভুলের সংশোধনী দেয়া হয়েছে। বাংলা বইয়ে ২০, ইংরেজি ১১, গণিত ২৩, বিজ্ঞান ৪, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৫, ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫, জীবন ও জীবিকা ২৮, ইসলাম শিক্ষা ৯, হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১২টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি।
এদিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইগুলোর ভুলভ্রান্তির যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে, সেগুলো এখন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ই-মেইলে পাঠানো হবে। তারপর প্রধান শিক্ষক শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সংশোধনীগুলো জানানো এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে সংশোধনীগুলো সংযোজনের ব্যবস্থা নেবেন। অর্থাৎ আলাদা ছাপিয়ে সংশোধনী দেয়া হচ্ছে না।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এরই মধ্যে কীভাবে নির্দেশনা যাবে, তা অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেয়া সংশোধনীতে দেখা যায়, প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে এই সংশোধনী দেয়া হয়েছে। কোনো পৃষ্ঠায় ভুলগুলো কী ছিল, সেটি উল্লেখ করে সংশোধনীগুলো কী কী হবে, তা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি করণীয় সম্পর্কে মন্তব্যও করা হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে ১০টি বই পড়তে হয়। তবে বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতিটি শ্রেণিতে মোট বই ১৩টি। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১টি এবং সপ্তম শ্রেণির ১২টি বইয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আগামী বছর থেকে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই বদলে যাচ্ছে। যদিও বিতর্কের মুখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। এরপর প্রশ্ন ওঠে, এ দুটি বই কীভাবে পড়ানো হবে?
নতুন সংশোধনীতে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন’ বইয়ের বিষয়ে আলাদা নোট দিয়ে বলা হয়েছে, অনুশীলন বইয়ে যে যে স্থানে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ অথবা রিসোর্স বই দেখতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সে স্থানে শিক্ষকের সহায়তায় বা উপযুক্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। অর্থাৎ প্রত্যাহার করা দুটি বইয়ের বিষয়ে শিক্ষকেরা সহায়তা করবেন অথবা অন্যান্য উৎস থেকে শিক্ষার্থীরা তা সংগ্রহ করবে।
উল্লেখ্য, ওই দুটি বই প্রত্যাহারের সময় এনসিটিবি জানিয়েছিল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েরও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব ক’টি বইয়েরই ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দেয়া হবে, যা এখন দেয়া হলো।
সেশন রুটিন প্রকাশ : নতুন সেশন রুটিন ব্যবহারে এনসিটিবির নির্দেশনায় বলা হয়েছে- রোল কলের কারণে প্রথম পিরিয়ড হবে ৬০ মিনিটের এবং বাকি পিরিয়ড হবে ৫০ মিনিটের।
প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশ্যই প্রতিদিন সমাবেশে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত গাইবার ব্যবস্থা করবে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী শরীরচর্চা, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন উপস্থাপনা যেমন গান, নাটক, আবৃত্তি, নাচসহ অন্যান্য আয়োজন করতে পারে। এ লক্ষ্যে সমাবেশের সময় বাড়াতে হলে প্রয়োজনে বিদ্যালয় শুরুর সময় এগিয়ে আনা যাবে। কিন্তু কোনো মতেই সেশনের সময় কমানো যাবে না। রুটিনে উল্লেখিত কোনো বিষয়েরই সেশন সংখ্যা বা ক্রম পরিবর্তন করা যাবে না। জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন (২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, পহেলা বৈশাখ, ১ মে, ১৫ আগস্ট, ১৬ ডিসেম্বর) শিখনকালীন কার্যক্রম হিসেবে ধরা হয়েছে। জাতীয় দিবসে সেশন রুটিন অনুসরণ না করে, দিবস পালনে বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকরা আগে থেকেই পরামর্শ করে শিক্ষক সহায়িকার নির্দেশনা অনুসরণ করে বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবসের কার্যক্রম সাজাবেন। যাতে করে এসব দিবস পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা প্রয়োজন তা অর্জিত হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সেশন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। একটি শ্রেণির একটি বিষয়ে একজন শিক্ষককেই দায়িত্ব দেয়া যাবে। একই শ্রেণির একই বিষয়ে একাধিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া যাবে না। যে শিক্ষক যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তাকে সে বিষয়েরই সেশন/শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে।