মন্ত্রীদের বক্তব্য খালেদাকে ফের কারাগারে নেয়ার ষড়যন্ত্র

ফখরুলের মন্তব্য

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মন্ত্রীদের ‘অপপ্রচার’ ফের কারাগারে নেয়ার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের নানারকম বক্তব্যের’ প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। একবার তাকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে এবং তখনো বারবার করে বলেছি যে, তিনি খুব জটিল কিছু রোগে ভুগছেন। তার মধ্যে আছে লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা, ডায়বেটিক জটিলতা আছে। এর পরেও যদি তারা এই সমস্ত কথাবার্তা বলে, অপপ্রচার করে, এই কথা বলার অর্থই হচ্ছে তারা আবারো কোনো গভীর চক্রান্ত করছে। যে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে তারা আবার কারাগারে নিতে পারে কি না, পরিকল্পনা-চক্রান্ত করছে কি না সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বারবার করে বলেছি যে, তার চিকিৎসা পাওয়া একটা মৌলিক অধিকার। এজন্য ডাক্তার বলেছেন, তার মেডিক্যাল বোর্ড বলেছেন যে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। বাংলাদেশে তার সেই উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার সে বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু এই ধরনের কথা বার্তা বলে অমানবিক আচরণ করছেন তারা আমাদের দেশনেত্রীর সঙ্গে এবং জনগণের সঙ্গে একটা তামাশা করছেন।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি মহাসচিব।

অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল জনগণের স্বার্থবিরোধী : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এটি নানা কারণে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থবিরোধী, একতরফা, নির্যাতনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। এই আইনটি প্রণয়নে কোনো পর্যায়ই অংশীজনের মতামত নেয়া হয়নি। বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত বিলটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণ্ন করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থি। বিএনপি প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনের পরিধি শুধু বিস্তৃত নয়, অসীম। সরকার ইচ্ছা করলেই যে কোনো শিল্প, প্রতিষ্ঠা, পেশা ও সেবাকে এই আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে। এই প্রস্তাবিত আইনকে প্রচলিত শ্রম আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে যুগ যুগ ধরে আন্দোলন করে শ্রমজীবী জনগণ যা কিছু অধিকার অর্জন করেছিল তা নাকচ করে দেয়া হবে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন নং ৮৭ ও ৯৮ অনুসমর্থন করেছে। যেখানে ধর্মঘটের অধিকারকে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বিলে দেশের বিপুল সংখ্যক শিল্প, প্রতিষ্ঠান ও সেবা খাতকে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা’ চিহ্নিত করে শ্রমজীবী মানুষের ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেয়ার অর্থ হলো তাদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধু শ্রমজীবী নয়, পেশাজীবীরা প্রস্তাবিত আইনটির প্রতিবাদ করছে। আমাদের ডাক্তার ও নার্সরাও প্রতিবাদ জানিয়েছে, তারা এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে, তারা বলেছে এটা বাতিল না করা হলে তারাও আন্দোলনে নামবে। আমাদের দেশের শ্রমিকদের ফেডারেশন স্কপ প্রতিবাদ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ চাপ্টার এর প্রতিবাদ করেছে, ‘ইন্ডাস্ট্রি অল’ যে আন্তর্জাতিক সংগঠন তার বাংলাদেশ চাপ্টার এর প্রতিবাদ করেছে। সবাই এর প্রতিবাদ করছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে যেমন একটা ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে তেমনি এই প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে আরেকটা বৃহত্তর পরিসরে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হবে। ধর্মঘট করার অধিকারটা খুব ব্যাসিক ট্রেড ইউনিয়ন রাইট। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিশন অব হিউম্যান রাইটসে বলা হয়েছে যে, ট্রেড ইউনিয়ন রাইট ইজ এ হিউম্যান রাইট। এই অধিকার কেড়ে নেয়ার মানে হলো আপনার মূল অধিকার কেড়ে নেয়া। যার ফলে আপনার ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতনের সুযোগ অবারিত হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহুমদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।