ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কাছ থেকে সূর্য যেমন

কাছ থেকে সূর্য যেমন

কাছ থেকে দেখলে সূর্যকে কেমন লাগে- এই কৌতূহল অনেকেরই। আর সেই কৌতূহল দূর করতে এগিয়ে এসেছেন দুই মহাকাশ চিত্রশিল্পী অ্যান্ড্রু ম্যাকার্থি ও জেসন জুয়েনজেল। ৯০ হাজার উপগ্রহচিত্র (স্যাটেলাইট ইমেজ) সংযুক্ত করে সেই ছবি প্রকাশ্যে আনেন তারা। অবশ্য এই দুই মহাকাশ চিত্রশিল্পী জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) সহায়তা নিয়েছেন তারা। যেসব উপগ্রহ চিত্রজুড়ে তারা এ ছবিটি প্রস্তুত করেছেন, সেগুলোর বেশিরভাগই সরবরাহ করা হয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। পাশপাাশি সোলার হোলিয়োস্ফেয়ারিক অবজারভেটরি স্পেসক্র্যাফট (সোহো) নামের একটি মহাকাশযানের পাঠানো চিত্রও ছবিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি ও নাসার যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সালে এ মহাকাশযান পাঠানো হয়েছিল। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সূর্যের ছবি প্রকাশ করা হলেও এই প্রথম সৌরমণ্ডলের এ প্রাণকেন্দ্রের স্পষ্ট ছবি সামনে এলো। সূর্যের মধ্যে কী কী ঘটে চলেছে, এই ছবিতে স্পষ্ট দেখিয়েছেন জেসন জুয়েনজেল ও অ্যান্ড্রু ম্যাকার্থি। মার্কিন বিজ্ঞানপত্রিকা লাইভ সায়েন্সকে এক সাক্ষাৎকারে তারা বলেন, এই ছবিতে সূর্যের বাইরের অংশকেই দেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে সূর্যের বায়ুমণ্ডলকে; সূর্যের উপরিস্তরে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা বিভিন্ন টর্নেডোও দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। অ্যান্ড্রু ম্যাকার্থি বলেন, এ ছবিটিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, একটি স্তরের নিচে আর একটি স্তর রয়েছে। সূর্যের উজ্জ্বল আলোর কারণেই এই স্তর দেখানো সম্ভব হয়েছে।

সৌরমণ্ডলের প্রাণকেন্দ্র সূর্যের উদ্ভব, শক্তির উৎস ও সম্ভাব্য মৃত্যু সম্পর্কে জানতে বহু বছর ধরে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমানে সৌরজগতের যে স্থানে সূর্যের অবস্থান, একসময় তার কাছাকাছি একটি বড় উজ্জ্বল নক্ষত্রের (সুপারনোভা) অস্তিত্ব ছিল। আজ থেকে ৫০০ কোটি বা তার কিছু বেশি সময় আগে সেই সুপারনোভার অভ্যন্তরে প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। এতে নক্ষত্রটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং অন্তর্গত বস্তুকণা ও গ্যাসীয় পদার্থ মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বস্তুকণা ও গ্যাসীয় উপাদানের অণুগুলোর অন্তর্গত অভিকর্ষ বলের প্রভাবে সেসব পরস্পরের কাছাকাছি আসতে থাকে, সৃষ্টি হয় মহাজাগতিক এক মেঘের। এ প্রক্রিয়াটি শেষ হতে কয়েক কোটি বছর সময় লেগেছিল।

তারও কয়েক কোটি বছর পর ওইসব উপাদান পরস্পরের সঙ্গে আরও কাছাকাছি আসে এবং গ্যাসীয়, বিশেষ করে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম অণুগুলো পৃথক হয়ে এক জায়গায় পুঞ্জিভূত হয়ে সূর্যের আকৃতি নেওয়া শুরু করে। অন্যান্য যেসব বস্তুকণা ও গ্যাসীয় উপাদান ছিল, সেসব থেকে জন্ম হয় পৃথিবীসহ সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহের। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছিল আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে। বাস্তবে সৌরমণ্ডলের প্রাণ মাঝারি আকৃতির এই নক্ষত্রটির পুরোটাই গ্যাসীয় তরল। সায়েন্স অ্যালার্ট নামের অপর একটি মার্কিন সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আজ থেকে আরো ৫০০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে একটি বিশাল লাল রঙের দানব নক্ষত্রে। সেটি হবে সূর্যের মৃত্যুর প্রাথমিক স্তর। এই স্তরে সূর্যের মধ্যভাগের অংশটি সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং বাইরের অংশটি অভিকর্ষ বল হারিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে। তরল সেই আগ্নেয় পদার্থের স্রোত মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছাবে। এদিক থেকে বলা যায়, সূর্যের মৃত্যুর প্রাথমিক স্তরেই সৌরমণ্ডলের অন্তত চারটি গ্রহ- বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত