ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ

সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল ১২ টাকা

বাড়তি ডিম ও সবজির দাম
সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল ১২ টাকা

ভোজ্যতেলের আমাদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বোতলজাত তেলের দাম ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম এর আগে ছিল ১৮৭ টাকা। সে হিসাবে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল ১২ টাকা।

গতকাল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মোল্লার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে জানানো হয়, ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার প্রদত্ত ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসেসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ভোজ্যতেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

নতুন মূল্য অনুযায়ী- খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৭৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৯৯ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৬০ টাকা, পাম সুপার খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৮৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৬৭ টাকা। আর পাঁচ লিটার ২১ টাকা কমিয়ে ৯০৬ টাকা এবং পাম ওয়েলের দাম ছিল ১১৭ টাকা। গত ১৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ভোজ্যতেলের এ দাম নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে প্রতিলটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা, খোলা তেলের দাম ৯ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৫৪ টাকা এবং পামওয়েলে ১৮ টাকা বেড়েছে।

এর আগে ১৭ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাম অনুযায়ী, ১২ টাকা বাড়িয়ে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯২ টাকা, ৫ লিটারের দাম ৯২৫ টাকা, খোলা প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭২ টাকা এবং প্রতিলিটার পাম ওয়েলের দাম ১২১ টাকা করা হয়।

এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানিতে সরকারের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। অবিলস্বে এ মূল্য কার্যকর হবে। এর আগে ৩০ এপ্রিল বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।

এদিকে গত বছরের মার্চ মাসে ভোজ্যতেলের আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ের জন্য কম মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছিল। ৩০ এপ্রিল তার সময় শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন বেশি ভ্যাট দিয়ে পণ্য খালাস করতে হবে, বাজারেও ছাড়তে হবে বলেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর পক্ষে। আগের হারে এখন ভ্যাট আদায় হবে বলে এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ২০৫ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১ হাজার ৫ টাকা, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮৪ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১২৯ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে বলে সমিতিটি দাবি করছে। সমিতিটি বলেছে, গত বছরের ১৬ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, তার মেয়াদ ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে। ১ মে থেকে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে পণ্য খালাস করতে হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদন পর্যায়েও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ করতে হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে জানান, প্রজ্ঞাপনটির মেয়াদ বাড়াতে চলতি মাসের শুরুর দিকেই আমরা এনবিআরকে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু এনবিআর থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। প্রজ্ঞাপনটি উঠে গেলেও ভোজ্যতেলের দামের ওপর প্রভাব এখনই পড়ার কথা নয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পবিত্র রমজান মাসের চাহিদা ৩ লাখ টনের কাছাকাছি। স্থানীয় উৎপাদন হয় দুই লাখ টন, আর বাকি ১৮ লাখ টনই আমদানি করতে হয়। এদিকে হঠাৎ করে ডিমের দাম হালিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ডজনে বেড়েছে ১৫ টাকা। কয়েক দিন আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৩০ থেকে বাজার ভেদে ১৩২ টাকা। গতকাল দাম উঠে যায় ১৪৮ টাকায়। আর দু-একটি সবজির দাম বাড়লেও অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছে ঈদের আগে বৃদ্ধি পাওয়া দামে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ধরন ভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, লাউ ধরন ভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শের কেজি বাজার ভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ধুন্দলের কেজি ১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা (২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম), ক্যাপসিকাম ২৫০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ধরন ভেদে ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা, আলু ৪০ টাকা এবং লাল আলু ৫০ টাকা। শাকসবজি বিক্রেতারা বলছেন, আগের মতো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য কিছু কিছু সবজির দাম বেড়েছে। তবে ক্রেতারা জানান, কিছু সবজির দাম বেড়েছেই। ইচ্ছা হলেই দোকানদাররা দাম বাড়িয়ে দেয়। দাম বাড়ানোর কারণ নেই, যুক্তি নেই। দাম বাড়িয়ে দিলেই হলো। আর ক্রেতারা নিতেও বাধ্য। কাঁচাবাজার হোক কিংবা অন্য যেকোনো পণ্যই হোক না কেন, দাম ঠিক বা যৌক্তিক রাখতে হলে বাজারের পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন ক্রেতারা। সেই সঙ্গে নৈতিকতা একটি বড় ব্যাপার বলেও মন্তব্য তাদের। বাজারে এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। ছোট্ট রুইয়ের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মধ্যে। বড় কাতল মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ছোট কাতলের কেজি ৩০০ টাকা থেকে নিচে। বাঁশপাতা ৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪৮০ থেকে বাজার ভেদে ৫০০ টাকা, সরপুঁটি ২০০ টাকা, বাজার ভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, ট্যাংরা ৭০০ টাকা, ট্যাংরা (চাষ) ৬০০ টাকা, আইড় মাছ ৭০০ টাকা, বেলে মাছের ধরন ভেদে ৯০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। পাঙাশ মাছ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। সিলভার কাপ ২০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে বাজার ভেদে ৪৫০ টাকা। কার্ফু মাছের কেজি ২০০ থেকে বাজার ভেদে ২৩০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশের দর ১ হাজার ৬০০ টাকা; ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম বাজার ও ধরন ভেদে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। গরুর মাংস বাজার ভেদে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা। খাসি ১১০০ টাকা, ছাগল ৯০০ টাকা। ৯০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, লেয়ার ৩৫০ টাকা এবং হাইব্রিড (কক) ৩৫০ টাকা। ঈদের আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। দেশীয় প্রতি কেজি আদা ২৩০ টাকা (দেশি)। পেঁয়াজ ও রসুনের দাম আরেক দফা বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের ৫০ টাকা। আমদানি করা বড় রসুন ও দেশি মাঝারি ধরনের রসুনের কেজি ১৭০ থেকে বাজার ভেদে ১৮০ টাকা। দেশি ছোট্ট রসুনের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ঈদের আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল ও আলু। ছোট দানা মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, আমদানি করা বড় দানা মসুর ডাল ১০০ টাকা, ছোলার ডাল ৯০ টাকা, ছোলার খোসা ছাড়ানো ডালের কেজি ১০০ টাকা এবং ডাবলির ডাল প্রতি কেজি ৭০ টাকা। প্রতি কেজি আলু দাম ৪০ টাকা এবং লাল আলুর কেজি ৫০ টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত