জবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু

পরিবার বলছে হত্যা

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জবি সংবাদদাতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্টে অজ্ঞানরত অবস্থায় রাজু মারা গেলেও ঘটনার চার দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান রাজুর বাবা।

রাজুর পরিবার ও তার বন্ধুরা জানান, গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় থেকে শনিবার ঢাকায় ফিরে পুরান ঢাকার নারিন্দার একটি মেসে হঠাৎ খিঁচুনি দিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে রাজু। অবস্থা খারাপ দেখে রাজুর সহপাঠী ও মেসের অন্যরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে রাজুর পরিবারের দাবি, তাদের বাসার টিউবওয়েলের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘুমের ওষুধ বা এ জাতীয় কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে বিষক্রিয়ায় রাজুর মৃত্যু হয়েছে। একই টিউবওয়েলের পানি পান করে রাজুর পরিবারের বাকি সদস্যরাও বমি করে ও দুইদিন অতিরিক্ত ঘুমে মগ্ন ছিলেন বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

রাজুর বাবা কৃষক আকতারুল ইসলাম বলেন, ঘটনার আগের দিন শুক্রবার সকাল ১০টার সময় রাজু, রাজুর মা এবং বোন একসঙ্গে খাবার খান। খাবার খাওয়ার পর রাজুর মা ও বোনের বমি হয়। আমি সকালের নাস্তা ও টিউবওয়েলের পানি খেয়ে মাঠে বীজ বুনতে যাই। পরে বাসায় ফিরে দেখি রাজু, রাজুর মা ও আমার ছোট মেয়ে ঘুমাচ্ছে। মাঠের কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি, ওরা সবাই তখনও ঘুমাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় বোন (রাজুর ফুপু) ওদেরকে ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়াশব্দ দেয়নি। রাত সাড়ে ৯টায় রাজুর ঢাকায় যাওয়ার ট্রেন থাকায় রাত ৮টার দিকে তাকে টেনে তুলে দেয় তার ফুফু। রাজুর ফুপু রাজুকে স্টেশনে পৌঁছে দেন। সেখানে রাজুর ক্লাসমেট একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়ার সাথে তার দেখা হয়।

পরবর্তীতে ঢাকার ট্রেনে উঠার আগেই রাজু তার এই সহপাঠীকে তার অসুস্থতার কারণ সন্দেহজনক বলে জানান।

তিনি বলেন, তাদের টিউবওয়েলে হয়ত কেউ কিছু দিয়েছে এবং বাসার সবাই এই পানি খেয়ে ঘুমাচ্ছে।

রাজুর রুমমেট শরীয়তুল্লাহ জানান, শনিবার বিকালে রাজু খাওয়া দাওয়ার পর তিনি গায়ে হাত দিয়ে দেখেন রাজুর শরীর অনেক গরম। তখন কারণ জানতে চাইলে রাজু তাকে তাদের বাসায় এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে এবং সবাই টানা ঘুমাচ্ছে বলে জানান।

শরীয়তুল্লাহর ভাষ্যমতে, পরবর্তীতে রাজু খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর হঠাৎ খিঁচুনি উঠার মতো হয় এবং তিনি গিয়ে রাজুকে নাড়াচাড়া করে কোনো সাড়া না পেয়ে তার আরেক রুমমেট আরাফাতকে জানান। তারপর তারা রাজুর অন্য বন্ধুদের জানিয়ে তাকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।

রাজুর সহপাঠী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, আজগর আলীকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে বলা হয়। এম্বুলেন্সে করে রাজুকে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। তবে এখনও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, এই ঘটনায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। আমরা লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। সংশ্লিষ্ট থানাকেও অবহিত করা হয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়ারি থানায় যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। ওয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, ‘ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে, তবে এখনও আমরা রিপোর্ট হাতে পাইনি। ঘটনার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। স্থানীয় থানার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তারা মামলা দায়ের করতে চায়নি। এখন তারা চাইলেও মামলা করতে পারবে না। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে স্থানীয় থানার মাধ্যমে পুলিশই মামলা দায়ের করবে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’